বিরল ‘পাইগোপেগাস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল শিশু তোফা ও তহুরা। পৃথিবীতে এই ধরনের শিশু জন্ম নিয়েছিল মাত্র ১৪টি। এর আগে যে ১৩টি ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশই অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় মারা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের চিকিত্সকরা তোফা ও তহুরাকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছেন হাসপাতাল থেকে।
সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনিও আক্রান্ত হয়েছিল বিরল রোগে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে মুক্তামনির চিকিত্সার সব কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল। তারা এই ধরনের অপারেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের চিকিত্সকরাই তার অস্ত্রোপচার করেন। সফলভাবে অস্ত্রোপচার শেষে সুস্থ হয়ে উঠছে মুক্তামনি।
শুধু এই দু’টি ঘটনা নয়, এমন অনেক রোগের চিকিত্সা দেশের চিকিত্সকরাই করছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু সমস্যা হল- এই জটিল রোগের অপারেশন করতে যে ধরনের যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনা দরকার সেটার ব্যবস্থা নেই আমাদের।
তোফা ও তহুরাকে অপারেশন করতে গিয়ে অধ্যাপক শাহানূর ইসলামকে বহু মানুষের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। সেখানে আইসিইউ ছিল না, দু’টি বেড দিয়ে সাময়িক আইসিইউ বানানো হয়েছে। এভাবে নানা জোড়াপট্টি দিয়ে এমন জটিল অপারেশন করেছেন তিনি। এভাবে তো প্রতিনিয়ত জোড়াপট্টি দিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমার জন্য দু:সাহসিক একটা কাজ। সবার সহযোগিতায় কাজটা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পছন্দ করেন দেশে চিকিত্সা করাতে। গত শনিবার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে ‘নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করিয়েছেন তিনি। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশের এই হাসপাতালে দেড় বছর আগেও চিকিত্সা নিতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন বলেছিলেন, ‘আমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি তাহলে আপনারা আমাকে বিদেশে নেবেন না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিত্সা নেব। এই হাসপাতালে চিকিত্সা নেব। দেশের চিকিত্সকদের প্রতি আমার আস্থা আছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম ইত্তেফাককে বলেন, ‘দেশের চিকিত্সা ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা সেটাই করছি।’
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলছেন, ‘অন্য দেশের চিকিত্সকদের চেয়ে দেশের চিকিত্সকদের অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি। কারণ আমাদের চিকিত্সকরা প্রচুর রোগী দেখেন। আর রোগী দেখতে দেখতে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের সমস্যা যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনার অভাব। রাজধানীতে কিছুটা থাকলেও মফস্বলের অবস্থা তো খুবই খারাপ।’
অপর একজন চিকিত্সক বলেন, ‘আমাদের যন্ত্রপাতি কিনতে হলে প্রথমে পড়তে হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। এরপর টেন্ডারের নামে কিছু ঠিকাদার অর্ধেক টাকা লুটপাট করে নেন। তারপরও যে যন্ত্রপাতি আনার কথা সেটা আনা হয় না। আর যেটা আসে সেটা মফস্বল হাসপাতালে পৌঁছাতেই কার্যকারিতা অনেকাংশে নষ্ট হয়।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমাদের সমস্যা আছে, তবে আমরা একেবারে পিছিয়ে নেই। এখন আমরা ডাক্তারদের সঙ্গে বসছি। তাদের ঘাটতি কি আছে জানার চেষ্টা করছি। চিকিত্সা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আমাদের যেটা করা দরকার অবশ্যই সেটা আমরা করব।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনও ইত্তেফাককে বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যা করা দরকার তাই করব। জরুরী চিকিত্সা, আইসিইউ, সিসিইউ, অপারেশন ম্যানেজমেন্টসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। আশা করি সমস্যা থাকবে না।’