মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলল বাংলাদেশ

মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতেও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছরের মাথায় এসেই জিডিপির দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশটিকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।

গত মাসেই বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায় বলে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’র বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজার বিনিময় হার হিসেবে ডলার মূল্যমানের দিক দিয়ে গত অর্থবছরের (চলতি বছর জুনের ৩০ তারিখে শেষ হওয়া) হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৫৩৮ মার্কিন ডলার। যেখানে একই সময়ে পাকিস্তানের জিপিডি ১ হাজার ৪৭০ মার্কিন ডলার।

তবে ২৫ আগস্ট প্রকাশিত পাকিস্তানের সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্যে মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, সর্বশেষ ওই শুমারির তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের জনসংখ্যা এখন ২০ কোটি ৭৮ লাখ, যা দেশটির জনসংখ্যা নিয়ে আগের যে ধারণা ছিল তার ৯০ লাখেরও বেশি।

পাকিস্তানের জনসংখ্যার নতুন এ তথ্য হয়তো দেশটিকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জনবহুল দেশে পরিণত করেছে, তবে এই সংখ্যা তাদের মাখাপিছু জিডিপিকে ৪-৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে, যা এক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে আগের চেয়ে পণ্যমূল্য কমায় বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তানে ডলারের মান বেড়েছে। ফলে ১ হাজার ৪৭০ মার্কিন ডলার মাথাপিছু জিডিপি হলেও পাকিস্তানিদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।

মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। ১০ বছর ধরেই বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে, যা গত দুই বছরে ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এসময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও উল্লেখ করার মতো।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ৬-৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশটির জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২৯ শতাংশ। মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়, রাস্তাঘাট ও রেলপথসহ প্রায় সব অবকাঠামো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিল্প-কারখানাসহ অর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক আগেই বাংলাদেশকে আরেকটি বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছিল। ১৯৭০ সালে এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়।

দেশটির স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে গমের বাম্পার ফলন হলেও সামন্য পরিমাণও দেয়নি পূর্ব পাকিস্তানকে পাশাপাশি এক টুকরো কাপড়ও পাঠানো হয়নি। এ রকম দৈন্যদশা থেকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব সূচকে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দেশটির।

এক সময় পরিধেয় বস্ত্রের অভাবে থাকা দেশটি এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রফতানি করে। এখনও বাংলাদেশে কাজের পরিবেশের মান যেখানে থাকা উচিত সেখানে পৌঁছায়নি। তবে এক সময় যা ছিল তার চেয়ে এটি এখন অনেক ভালো।

বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি অন্য একটি উৎস থেকে বেড়েছে বলে প্রতিবেননে উল্লেখ করা হয়। ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় সংশোধন ঘটেছিল, যা পাকিস্তানের চেয়েও বড় ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সংশোধন নিন্মমুখী ছিল বলে এতে বলা হয়।