ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ের আদালতকে সহায়তা প্রদানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সভাপতি করে ৯ সদস্যের একটি আদালত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে মাসে অন্তত একটি সভা করতে হবে। সভার কার্য বিবরণী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠাতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, জেলা পর্যায়ে বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনাসহ সহজতর করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য মামলার সার্বিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখতে জেলা আদালত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর সমম্বয় করবেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
জানা গেছে, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে ফৌজদারি তদন্তের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী মামলা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর ওপর বর্তায়। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১(২) ধারা অনুযায়ী সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা পুলিশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাধারণভাবে নিম্ন আদালতে পিপি, এপিপিরা রাষ্ট্রবাদী মামলা পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও পিপিসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা আদালতে বিচার কাজে সহায়তা প্রদান করেন। যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সহজতর হয়।
জেলা পর্যায়ে বিচারকাজ পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট আদালতকে সহযোগিতা প্রদান ও ন্যায় বিচারের পথ প্রসারিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি আদালত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সভাপতি করে ৯ সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন- পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, জেলা কমান্ডেট আনসার ও ভিডিপি, র্যাব কমান্ডার, পিপি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র কারা তত্ত্বাবধায়ক/কারা তত্ত্বাবধায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তা/ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করতে পারবে।
আদালত সহায়তা কমিটির কার্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে- কমিটি প্রতি মাসে একটি সভার আয়োজন করবে, প্রয়োজনে কমিটি মাসে একাধিক সভা করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট আদালতের পর্যক্ষেণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী অনুরূপ ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সভার কার্যবিবরণী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠাবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে কার্যবিবরণী পাঠাতে বলা হয়েছে।
কর্ম পরিধি: ২৪টি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে এ কমিটির কর্ম পরিধি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন, বাস্তব অবস্থা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবেচনায় বিষয়গুলো অনুসরণ করার তাগিদা দেয়া হয়েছে।
সব শ্রেণির দায়রা আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন/চিফ জুডিসিয়াল/ মেট্রোপলিটন/জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে নিয়োজিত সরকারি কৌঁসুলি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৩৭৩ ধারার আলোকে রাষ্ট্রবাদী মামলার রায়ের কপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দফতরে প্রাপ্তির ব্যবস্থাকরণ।
কোনো জেলায় অথবা মেট্রোপলিটন এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৩ ধারার বিধান অনুযায়ী রায়ের অনুলিপি যথাসময়ে পাওয়া না গেলে ক্ষেত্রে মতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বা সলিসিটর উইংয়ের সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিচার শাখায় সব রায়ের কপি সংরক্ষণ এবং এ শাখা থেকে প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সভায় উপস্থাপন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পর্যক্ষেণ অনুযায়ী তদন্তের ত্রুটির কারণে আসামি খালাস পেলে অপরাপর মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে অনুরূপ তদন্ত কার্যক্রমে ভুল-ত্রুটি পরিহারের জন্য কমিটির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কোনো মামলায় কোনো হাজতি দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে আটক থাকলে/তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ অথবা তদারককারী না থাকলে ওই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিকরণে প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
কোনো মামলায় কোনো হাজতি দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটক থাকলে, আইনজীবী নিয়োগের সঙ্গতি না থাকলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থাকরণ/সংশ্লিষ্ট পিপি, পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আনা, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন।
দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা কল্পে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার তথা ই-মেল, ফ্যাক্স, মোবাইল ব্যবহার করাসহ ২৪ দফা। ২৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকসুদুর রহমান পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।