পথশিশুদের সার্বিক উন্নয়নে ৩ কোটি টাকার প্রকল্প

পথশিশুদের সার্বিক উন্নয়নে প্রায় ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

পথশিশু পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক ড. আবুল হোসেন বলেন, পথশিশুদের উন্নয়নে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ‘পথশিশু পূণর্বাসন কার্যক্রম’ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর কমলাপুর ও কারওয়ান বাজারে পথশিশুদের জন্য দু’টি শেল্টার হোম গড়ে তোলা হয়েছে। এক বছরে কমলাপুরে ৬৬৯ জন এবং কারওয়ান বাজার শেল্টার হোমে ২১৭ জন পথশিশু আশ্রয় পেয়েছে।

তিনি জানান, কমলাপুরে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন এবং কারওয়ান বাজারের শেল্টার হোমে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিশু আশ্রয় পেয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে এ সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়মিত থাকছে। আবার অনেকে রাত্রিযাপন করে বা দু’একদিন থেকে চলে যায়। তাদেরকে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় দেয়া হয়। লেখাপড়া করার তাগিদ দিয়ে বিদ্যালয়মুখী করার চেষ্টা করা হয়। এমনকি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও উৎসাহী করা হয়। শেল্টার হোমগুলোতে ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়া বিশেষ বিশেষ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল খেলার মাঠে পথশিশুদের জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

‘শিশুর ঠিকানা পথ নয়, সরকার দিবে নিরাপদ আশ্রয়’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রমের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

ড. আবুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পথশিশুদের উপর জরিপ চালানো হয়। এরপর ২০১৬ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এখন পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা মহানগরীতে এর কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরে সারাদেশে এ কার্যক্রম চালানো হবে।

তিনি বলেন, পথশিশুদের সার্বিক উন্নয়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও এগিয়ে এসেছে। পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ২২ বছর ধরে কাজ করছে।

অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৮২৮ জন পথ শিশু এই সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা পেয়েছে। ২৮ হাজার ৯১৮ জন বস্তিবাসী শিশু, ১৮ হাজার ৫৩২ জন কর্মজীবী শিশুসহ আইন জটিলতায় জড়িত, সহিংসতার শিকার, পাচারের শিকার শিশু ও প্রাক শৈশব দিবাযত্নের শিশুরা সহায়তা পেয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে দেশের প্রথম নির্যাতিত শিশুদের সহায়তায় ‘চাইল্ড হেল্প লাইন-১০৯৮’ পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ২৪ হাজারের বেশি শিশুর সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং চাইল্ড হেল্প লাইনের মাধ্যমে ১৪ হাজার শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ওয়াহিদা বানু বলেন, অপরাজেয় বাংলাদেশ ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ৮৫ হাজার ২৩৮ জন শিশুকে ৩০টি উন্মুক্ত বিদ্যালয়, ৩৬টি শিশুবান্ধব বিদ্যালয়, ১৩টি ড্রপ ইন সেন্টার, ১১টি আবাসিক ক্লাব, ৩টি জরুরি রাত্রীকালীন আশ্রয় কেন্দ্র, ২টি হোস্টেলের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও জামালপুর শহরে সেবা প্রদান করে আসছে। ব্যাংকের ১৭টি শাখার মাধ্যমে ৩ হাজার ৫শ’ শিশু সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাব পরিচালনা করছে।