কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এবার ভারতীয় গরু-মহিষ আসছে কম। গত বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে যে গরু-মহিষ ভারত থেকে এসেছিল, এবার তার চার ভাগের এক ভাগ এসেছে। সেগুলোর দামও বেশি। ফলে দেশি গরুর চাহিদা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অর্ধলক্ষাধিক গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকারী ১১ হাজারের মতো কৃষক ও খামারি ভালো দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিছুদিন আগেও ফুলবাড়ী উপজেলার খালিশাকোটাল, বিদ্যাবাগিশ, গোড়কমণ্ডল নামাটারী ও অনন্তপুর ভেলিরুতল, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কাটগির, শালঝোড়, ধলডাঙ্গা, চর উত্তর তিলাই ও বাঁশজানি, নাগেশ্বরী উপজেলার তরিরহাট, কঁচাকাটা, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া, চৌদ্দঘুড়ি ও পাখিউড়ারচর, উলিপুর উপজেলার দৈখাওয়ারচর এবং রৌমারীর সাহেবের আলগা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন শত শত গরু-মহিষ আসত। তার পর গরুপ্রতি ৫০০ টাকা ফি দিয়ে করিডোর করার পর বিক্রির জন্য তোলা হতো ভূরুঙ্গামারী, যাত্রাপুর, নাগেশ্বরী, রৌমারী ও রাজিবপুর হাটে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা গরু কিনতে এসব হাটে ভিড় করতেন। গত বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ৩৬ হাজার ৮০১টি গরু-মহিষ ভারত থেকে এসেছিল। এবার চিত্রটা পাল্টে গেছে। গত ১ জুন থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ২৬৮টি গরু-মহিষ এসেছে, যা চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। দামও বেশি। এ জন্য দেশি গরুর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন পাইকাররা। ভারত থেকে গরু আনয়নকারী ব্যবসায়ী উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার লিয়াকত আলী, নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের বারবিষ এলাকার হোসেন মির্জা ও আবদুল মজিদ জানান, সীমান্তে এখন বিএসএফের কড়া নজরদারি। পাশাপাশি বিজিবি টহল ও নজরদারি জোরদার করেছে। এজন্য গতবারের মতো গরু-মহিষ আনা যাচ্ছে না।
যাত্রাপুর হাটে গরু কিনতে আসা কুমিল্লার শাহরাস্তি এলাকার কামাল মিয়া, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এলাকার আশিকুর রহমান ও নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর এলাকার আবুল কালাম জানান, ভারতীয় গরু কেনার জন্য যাত্রাপুর হাটে এসেছেন। কিন্তু হাটে ভারত থেকে আনা গরু নেই বললেই চলে। যে দু-একটি আছে, তার দাম বেশি।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পাড়ে শনি ও মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাট বসে। নৌপথে আগে এখানে ভারতীয় গরু-মহিষ আসত। ক্রেতা-বিক্রেতার উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকত। এখন হাটে দেশি গরু-মহিষ আসছে, ভারতীয় গরু-মহিষ আসছে না। দেশি গরুর বেচাকেনা ক্রমেই জমে উঠছে।
এদিকে, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জেলায় এবার ১০ হাজার ৯১১ কৃষক এবং খামারি কোরবানির ঈকে সামনে রেখে সাড়ে ৬৭ হাজারের মতো গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ১২১টি ষাঁড়, দুই হাজার ৪৭৮টি বলদ, সাত হাজার ৪৫৮টি গাভী, ১৪ হাজার ৮৩৯টি ছাগল, ৭ হাজার ৪৯১টি ভেড়া রয়েছে।
সদর উপজেলার চর মাধবরাম এলাকার খামারি ইয়াছিন আলী জানান, তিনি ৩০টি ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। এবার দেশি গরুর চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন রায় জানান, জেলায় এবার যে পরিমাণ গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে, তাতে এখানকার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের কারণে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকারীরা স্টেরয়েড ও হরমোনজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেননি। ফলে এগুলোর মাংস নিরাপদ।