প্রতœ সম্পদ রক্ষায় দেশের প্রত্ন আইনকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন প্রত্ন আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই এবং সংযোজন বিয়োজনের কাজ শেষ হলেই আইনটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে। তারপর সংসদে আইনটি পাস হবে। উল্লেখ্য, প্রত্ন সম্পদ সংরক্ষণে যুগোপযোগী আইন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হয় না। অনেক প্রত্ন সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। পাচারও হয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রত্ন আইন পাস হলে দেশের প্রতিটি স্থানে যত প্রত্ন সম্পদ আছে তার সঠিক সংরক্ষণ ও রক্ষা করা সম্ভব হবে। নতুন আইন পাস হওয়ার পর প্রাচীন ইমারত সংরক্ষণ আইন-১৯০৪, পুরাকীর্তি (রফতানি নিয়ন্ত্রণ) আইন-১৯৪৭ এবং পুরাকীর্তি আইন-১৯৬৮ বিলুপ্ত হবে।
সরকার দেশের প্রত্ন সম্পদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ২০১৫ সালের মে মাসে নতুন আইনের খসড়া সাধারণের মতামতের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখা হয়। মতামতের জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেয়া হয়। সাধারণের মতামত পাওয়ার পর নানা জটিলতায় আইনটি মন্ত্রিসভার উঠেনি। পরবর্তী সময়ে উচ্চ পর্যায়ের কয়েক দফা বৈঠকে যাচাই বাছাইসহ বিশেষজ্ঞগণের মতামত নিয়ে সংযোজন বিয়োজনের কাজ হয়। সূত্র জানায়, আর সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। তা শেষ হলেই প্রথমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়ে নতুন আইনটি সংসদে উপস্থাপিত হবে।
প্রস্তাবিত আইনে প্রতœ সম্পদের স্থাবর সম্পদের সময়সীমা ধরা হয়েছে একশ’ বছরের পূর্ববর্তী যে কোন সময়ের ভূমি, ভূমির নিচে পানির নিচে প্রাচীন সম্পদ ও নিদর্শন। স্থাবর প্রতœ সম্পদ বলতে বোঝানো হয়েছে: যে কোন প্রতœতাত্ত্বিক ও প্রাচীন ঢিবি, স্তূপ সমাধিস্থল, গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রাচীন বাগান, প্রাচীন কাঠামো, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক চিত্রকর্ম সংবলিত শিলালিপি ও ভাস্কর্য, কষ্টি পাথরের মূর্তি। এই আইনে অস্থাবর প্রতœ সম্পদের সময়সীমা ৭৫ বছরের পূর্বের যে কোন সময় অথবা ওই সময়ের মধ্যে বহনযোগ্য সম্পদকে বোঝানো হয়েছে। যার মধ্যে পড়েছে ঐতিহাসিক বই, আসবাবপত্র, মুদ্রা, পোশাক অস্ত্র ইত্যাদি।
প্রতœ সম্পদের চারধারে ২শ’ ৫০ কিলোমিটার এলাকাকে বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা (বাফার জোন) বিবেচনা করে এর বাইরেরও এক কিলোমিটারের মধ্যে সকল ধরনের স্থাপনা নির্মাণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইনের স্থাবর সকল প্রতœ সম্পদের চার ধারে একশ’ মিটারকে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা (কোর জোন) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ সংরক্ষিত এলাকায় বা বাফার জোনে কোন বহুতল ভবন নির্মাণে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকার মধ্যে কলকারখানা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শোরুম, রাস্তাঘাট, ইটভাঁটি ও এ ধরনের কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কোন ধরনের খনন কাজ করা যাবে না। বাফার জোন ও কোর জোন ছাড়াও এর বাইরে এক কিলোমিটার জায়গাকেও সংরক্ষণ করা হয়েছে। নতুন আইনে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর ঘোষিত প্রতœ সম্পদ ধ্বংস, বিনষ্ট, পরিবর্তন পরিবর্ধন এবং নানাভাবে ত্রুটি করলে কারাদ-, অর্থদ- এবং এক সঙ্গে উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
স্থাবর ও অস্থাবর যে কোন প্রতœ সম্পদের অনুলিপি, রেপ্লিকা, প্রতিকৃতি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া করা যাবে না। সংরক্ষিত প্রত্ন সম্পদের মালিকানা (প্রতœ সম্পদ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার আগে ওই সম্পদের একক বা যৌথ উত্তরাধিকারী) যারই থাক সম্পদের ওপর খোদাই করা লেখা, লিপি অঙ্কন, কোন কিছুই নষ্ট করা যাবে না। কিছু লিখা বা অঙ্কনও করা যাবে না। মালিকানাবিহীন কোন কোন স্থাবর ও অস্থাবর নতুন প্রত্ন সম্পদ আবিষ্কার ও অস্তিত্বের খবর পাওয়া গেলে প্রত্ন অধিদফতরের মহাপরিচালক তা যাচাই বাছাই করে ওই সম্পদকে প্রত্ন সম্পদ ঘোষণা করে তার সুরক্ষা সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রস্তাবিত আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে প্রত্ন সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ বা তদারকির জন্য উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা যাবে। প্রতœতত্ত্ব অদিদফতরের মহাপরিচালককে সভাপতি করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি প্রতœতত্ত্ব বিষয়ে বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন ৩ জন বিশেষজ্ঞ, যে কোন পাবালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অথবা তার নির্বাচিত প্রতিনিধি, বিশেষ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিশেষায়িত জ্ঞানের অধিকারী একজন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক অথবা তার মনোনীত একজন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হবেন।
ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারী ভূমিতে অবস্থিত কোন স্থাবর প্রত্ন সম্পদ ও প্রত্ন স্থান প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রয়োজন অনুযায়ী লিখিত চুক্তির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সরকারী অনুমোদিত জাদুঘর ট্রাস্টি বা সংস্থাকে তত্বাবধানের দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকবে উক্ত প্রত্ন সমৃদ্ধ স্থানটি সাধারণের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। প্রবেশ মূল্য সরকার নির্ধারিত হয়ে থাকলে তার অর্ধেক পাবে তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ। বাকি অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা হবে।
খসড়ার একটি ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে : অস্থাবর প্রত্ন সম্পদ অবেধভাবে বা প্রকৃত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিদেশে পাচার করা হলে আন্তর্জাতিক আইনগুলোর মাধ্যমে তা বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে। যদি কোন প্রতœ সম্পদ বা প্রত্ন স্থান বিনষ্ট ধ্বংসের মুখোমুখি হয় বা বিধ্বস্ত হয় তাহলে সরকারের নির্দেশক্রমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক ওই সম্পদ এবং আইনে উল্লিখিত সংরক্ষিত এলাকা অধিগ্রহণ করতে পারবে। কোন ধর্মীয় উপাসনালয় প্রত্ন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হলে তা সংরক্ষিত হবে। নতুন আইনে প্রত্ন সম্পদ রক্ষায় কোন আইন অমান্য করলে বা আইনের নির্দেশ উপেক্ষিত হলে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- অর্থদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে।