পাট চাষে সুদিন ফিরছে

চলতি বছর পাবনায় পাটের বাম্পার আবাদ হয়েছে। কয়েক বছর ধরে পাটের দাম তেমন না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং গত বছর পাটের দাম কিছুটা ভালো পাওয়ায় পাট চাষের পরিধি বৃদ্ধি করেছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যে কৃষকরা ক্ষেত থেকে পাট কেটে পানিতে জাগ ও পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছর এ জেলায় ৪৫ হাজার ৭৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এ থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার বেল।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়েছে সুজানগর উপজেলায়। এ উপজেলায় ১০ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলায় ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর, আটঘরিয়ায় ৪ হাজার ৮২৮, ঈশ্বরদীতে ৫১১, চাটমোহরে ৮ হাজার ৫৯০, ভাঙ্গুড়ায় ৬৫০, ফরিদপুরে ৭১০, বেড়া উপজেলায় ২ হাজার ৫১৫ ও সাঁথিয়া উপজেলায় ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেত থেকে কৃষকরা পাট কাটছেন। কোথাও কোথাও পাট জাগ দিতে ও পাট ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছে নারী-পুরুষ।

আতাইকুলা থানার তৈলকুপী গ্রামের পাট চাষি আব্দুল মান্নান জানান, কয়েক বছর আগেও পাট চাষ করে লোকশান গুনতে হয়েছে তাদের। চলতি মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকায় আবাদ ভালো হয়েছে। ধান আবাদ করে বরাবরই লোকসান গুনতে হয়। তাই অনেক চাষি এ বছর পাটের আবাদ করেছেন।

এ ছাড়া দেশে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। এ কারণে বেড়েছে পাটের চাহিদা। পাটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশ বেড়েছে। এ ছাড়া আগে পাটখড়ির দাম পেতেন না চাষিরা। পাটখড়ি প্রক্রিয়াজাতের কারখানা হওয়ায় জেলায় পাটখড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে। পাটের সঙ্গে সঙ্গে পাটখড়ি বিক্রিতে দামও ভালো মিলছে। তাই গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর পাটের আবাদ বেড়েছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভুতি ভূষণ সরকার জানান, দেশে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাওয়ায় দিন দিন পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর পাবনা জেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ বেশি হয়েছে। আগামীতে এ জেলায় পাটের আবাদ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এতে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পাটচাষিরাও এ বছর লাভের আশাই করছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের আবাদ ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে রয়েছে হাসির ঝিলিক। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও কোথাও পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। এবার ঠাকুরগাঁও জেলায় পাটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৮৭২ হেক্টর আর উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩২২ হেক্টর জমিতে।

ঠাকুরগাঁও রহিমানপুর এলাকার পাটচাষি শরিফুল ইসলাম জানান, পাটের বর্তমান বাজারে কৃষকের লাভ হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। আর প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মাউদুদুর রহমান জানান, এবার গত বছরের তুলনায় জেলায় পাটের আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি। পাটের ন্যায্য দাম পেলে চাষিদের মধ্যে পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে। এ জেলায় যদি পাটভিত্তিক কোনো শিল্প কারখানা গড়ে উঠত তাহলে কৃষকরা আরও ভালো দাম পেত।