মাছে মাসে আয় লাখ টাকা

‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ এ প্রবাদকে সত্য প্রমাণ করেছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা গ্রামের মৎস্য চাষি মোঃ মাসুদুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল গ্রামে একটি মাছের খামার গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন তিনি শুধু বাস্তবায়নই করেননি, মাছ চাষ করে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন দুইবার। অর্জন করেছেন অভাবনীয় সাফল্য। মাছ চাষে সফলতা অর্জন করায় জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতর ২৪ জুলাই তাকে সম্মাননা দিয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে মাছ বিক্রি থেকে মাসে তার আয় প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি। মাসুদুরের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উপজেলার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ শুরু করেছেন।
মাসুদুর ২০০৭ সালে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে মৎস্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে নিজেদের ৫০ শতক জমির ওপর নির্মিত পুকুরে ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন মাছ চাষ। বর্তমানে তিনি ছোট-বড় ৭টি পুকুর নিয়ে ‘আল মাসুদ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে গড়ে তুলেছেন একটি মৎস্য খামার। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে এ পুকুরগুলোয় মিশ্রকার্প, পাঙ্গাশ, গুলশা, পাবদা, শিংসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়েন। ৮ মাস ধরে খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে মাছগুলো বড় করে মে মাস থেকে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। তার খামারে মাছের খাবার দেয়া, জাল দিয়ে মাছ ধরা ও পরিচর্যায় দুইজন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তার আয় প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি।
এ বছর মাছ চাষ থেকে তার ৮ লাখ টাকার বেশি লাভ হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে মাসুদুর এখন স্বাবলম্বী। তার এ সফলতা উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার সফলতায় অনেক বেকার যুবক উদ্বুদ্ধ হয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন।
মাসুদুর বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। ফলে মাছের বৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে। মৎস্য খামার স্থাপনের ৬ মাস পর থেকেই তিনি মাছ বিক্রি শুরু করেন। এ বছর প্রায় ২৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা আয় হয়েছে তার। তিনি আরও জানান, মৎস্য চাষিদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে মাছ চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা সম্ভব হবে।
উপজেলার চেংগুরিয়ার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় মাসুদুরের খামারের মাছের গুণগত মান ভালো। প্রতি সপ্তাহে তিনি মাসুদুরের খামার থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাছ কিনেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষ করে মাসুদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তাকে দেখে এ এলাকার অনেকে মাছ চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।
মাসুদুরের স্বপ্ন তার খামার আরও বড় করার। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও যাবে তার খামারের মাছ। সবার সহযোগিতা পেলে তার এ স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।