পোশাকে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

তৈরি পোশাক খাতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১৬ সালে এ খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় রফতানিকারক দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি পোশাকের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রফতানির অংশও বেড়েছে। এর কারণ, বিশ্বব্যাপী চাহিদা দুর্বল থাকায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোও খুব একটা ভালো করতে পারেনি। কারও কারও রফতানি কমেছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডবি্লউটিও) গত শুক্রবার বিশ্ব বাণিজ্যের পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের বার্ষিক প্রকাশনা প্রকাশ করেছে। এতে দেশওয়ারি আমদানি-রফতানির পরিসংখ্যানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক রফতানি ও আমদানির ওপর আলাদা বিশ্লেষণ রয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ১৬১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে বরাবরের মতো শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। তবে দেশটির রফতানি আগের বছরের চেয়ে ৭ শতাংশ কমেছে। মোট রফতানিতে চীনের অংশও কমেছে। ২০১৫ সালে মোট পোশাক রফতানিতে চীনের অংশ ছিল ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। প্রতিবেদনে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাম থাকলে এ জোট মূলত ২৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত। ফলে দেশওয়ারি রফতানির বিবেচনায় চীনের পরেই বাংলাদেশ।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২৮ বিলিয়ন ডলার (২৮০০ কোটি ডলার) পোশাক রফতানি করেছে। রফতানি বেড়েছে ৬ শতাংশ। আর বিশ্বের মোট পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অংশ ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ওই বছর বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছিল ৬ শতাংশ হারে।

শীর্ষ দশে বাংলাদেশের পরে রয়েছে ভিয়েতনাম। দেশটি গত বছর ২৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। তাদের রফতানি বেড়েছে ৫ শতাংশ। মোট বাজারে ভিয়েতনামের অংশ ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরে ভারত রফতানি করেছে ১৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। বিশ্ব রফতানিতে ভারতের অংশ ৪ শতাংশ। তবে ২০১৬ সালে ভারতের রফতানি কমেছে ২ শতাংশ। একমাত্র কম্বোডিয়ার রফতানি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো ৬ শতাংশ। শীর্ষ দশে থাকা তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার রফতানি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে কম।

তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের কাছে এ পরিসংখ্যানের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের পঞ্জিকাবর্ষে রফতানি মোটামুটি ভালো ছিল। চলতি বছরে এসে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসে রফতানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। যখন পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান আসবে তখন দেখা যাবে আগের বছরের চেয়ে অবনতি হয়েছে। তার মতে, প্রতিযোগী অনেক দেশে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দর যেভাবে কমেছে, টাকার ক্ষেত্রে তা হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে নানা অপপ্রচারের প্রভাবও রয়েছে।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ তার মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে। ২০১৭ সালে এ পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের রফতানি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মনে হচ্ছে, আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সাল তৈরি পোশাক খাতের জন্য খারাপ যাবে। তিনি বলেন, নানা কারণে চীন তৈরি পোশাক রফতানি নির্ভরতা কমিয়ে অন্য শিল্পে মনোযোগ দিচ্ছে। চীনের এই ছেড়ে দেওয়া বাজারের অংশ কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম কিছুটা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সে তুলনায় বাংলাদেশ এ সুবিধা নিতে পারছে না। বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে পারবে।

ডবি্লউটিওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সামগ্রিক রফতানি চাঙ্গা ছিল না। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে রফতানি কমেছে ৬ শতাংশ। এশিয়ার ক্ষেত্রে কমেছে ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ মোট ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। আর আমদানি করেছে ৪১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ সেবা রফতানিতে অনেক ভাল প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০১৬ সালে যেসব দেশ বাণিজ্যিক সেবা রফতানিতে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ।