পোলট্রি শিল্পে ভাগ্য বদল লক্ষাধিক যুবকের

রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার শাহজাদা মিয়া (২৬)। ডিগ্রি পাসের পর চাকরি না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছে না ঘুরে তিনি বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে মুরগি খামার গড়েন। দু-তিন মাসের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ান তিনি। খরচ বাদ দিয়েও ভালই লাভ থাকে। এভাবেই তার জীবনের গল্প বলছিলেন শাহজাদা।

শাহজাদার মতো রংপুর বিভাগে পোলট্রি শিল্পে লাখেরও বেশি বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের অধিকাংশই যুবক। ১০ বছরে এ শিল্পের প্রসার হয়েছে ১০ গুণের বেশি। বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ওপর। চলতি বাজেটে পোলট্রি খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ শিল্পের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে মুরগির খামার রয়েছে ৬ হাজার ১৩৯টি। এর মধ্যে লেয়ার ২ হাজার ৩৭৯টি এবং ব্রয়লার ৩ হাজার ৭৬০টি। এতে মোট মুরগির সংখ্যা ২ কোটি ৮৮ লাখ ১ হাজার ৭৭৯টি এবং হাঁসের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪২টি। অমিষের চাহিদা পূরণ ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে একজন মানুষের বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। বিভাগে ডিমের চাহিদা রয়েছে ১৬২ কোটি পিস। গত

অর্থবছর ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪৩ কোটি পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪০ কোটি পিস। ১০ বছর আগে এর উৎপাদন

ছিল ১০ ভাগের এক ভাগ।

অন্যদিকে, এ বিভাগের ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষের মাংসের চাহিদা রয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার টন। প্রতিদিন একজনের মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম, সেখানে আমরা পাচ্ছি ১১০ গ্রাম। বছরে এ অঞ্চলে মাংস উৎপাদন হচ্ছে ৬ লাখ ২ হাজার টন। এর মধ্যে মুরগির মাংস খায় বছরে গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৬৫ কেজি। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে বার্ডফু্লর ভয়াবহ সংক্রমণে রংপুরে এ শিল্পের প্রচুর ক্ষতি এবং অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেলেও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এ শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে পরিচালনা, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ এবং খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমের সুবাদে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ব্যবসা পরিচালনা করে হাজার হাজার উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে পোলট্রি খাবারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এ শিল্প অগ্রসরের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের উপপরিচালক মীর ফারুক হোসেন জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত ১০ বছরে পোলট্রি শিল্প এ অঞ্চলে ১০ গুণ বেড়েছে। এ শিল্প বিকাশের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পোলট্রি খাদ্য থেকে শুরু করে এ শিল্পনির্ভর সব ধরনের পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখ উচিত। তাহলেই খামারের সংখ্যা বাড়বে এবং বেকার সমস্যা আর থাকবে না।