সফল বাংলাদেশ রিপোর্ট: বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন গ্রামীণ জনপদে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র-বিমোচনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন উপশম ও অভিযোজন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে পর পর ৫ বার শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত নওগাঁ জেলায় গত আট বছরে ১১টি উপজেলায় সামাজিক বনায়নের আওতায় বিপুল পরিমাণ বাগান সৃজন করা হয়েছে। এসব বাগান ও গাছের পরিচর্যা করে উপকারভোগীরা অর্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭শ ৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ উপকারভোগী ১৫ হাজার ২শ ৪৯ জন এবং মহিলা’র সংখ্যা ৩ সহাজার ৪শ ৮৯ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় প্রয়োজনীয় বনায়ন সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নওগা জেলার সংযোগ সড়ক, গালিজ বাগান, বাঁধ বাগান (ষ্ট্রীপ) সৃজন করা হয়েছে ১ হাজার ৮শ ২২ কিলোমিটার। এসব বাগানের উপকারভোগী সংখ্যা ৯ হাজার ৫শ ৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৮শ ৭৭ জন ও মহিলা ১ হাজার ৬শ ৯৪ জন। আম বাগানে চারা রোপন করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪শ ৬৪টি। আমবাগানের মোট উপকারভোগী সংখ্যা ৪ হাজার ৮শ ৯৫ জন। র্এ মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৯শ ৭০ জন এবং মহিলা ৯শ ২৫ জন। খয়ের বাগানে মোট গাছের চারা রোপন করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৭শ ৫০টি। এসব বাগানের উপকারভোগী সংখ্যা ১ হাজার ১শ ১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮শ ৬৫ জন এবং মহিলা ২শ ৪৫ জন। লাক্ষা বাগানে মোট চারা রোপিত হয়েছে ৩৫ হাজার ২শ ৫০টি। এই বাগানে উপকারভোগী সংখ্যা মোট ৬শ ৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫শ ৭৩ জন এবং মহিলা ১শখ ২২ জন।
উডলট বাগান সৃজিত হয়েছে মোট ১শ ৮১ দশমিক ৫০ হেক্টর। এখানে মোট উপকারভোগী সংখ্যা ১ হাজার ২শ ৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯শ ২৯ জন এবং মহিলা ২শ ৭৮ জন।
মোট চর বাগান সৃজিত হয়েছে ১শ ৩৭ দশমিক ৩৩ হেক্টর। এসব চর বাগানে উপকারভোগী সংখ্যা ৫শ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩শ ৮০ জন এবং মহিলা ১শ ২০ জন।
বাঁশ বাগান সৃজিত হয়েছে ১শ ৮১ হেক্টর। বাঁশবাগানের মোট উপকারভোগী সংখ্যা ৪শ ৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪শ ৪০ জন ও মহিলা ৫০ জন।
মোট বেদবাগান সৃজিত হয়েছে ৮৪ হেক্টর জমিতে। এসব বেত বাগান পরিচর্যা করেন মোট ২শ ৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২শ জন ও মহিলা ৫০ জন।
কুষি বন বাগান মোট ৮ হেক্টর সৃজন করা হয়েছে। এই বাগানে মোট উপকারভোগী সংখ্যা ২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ জন ও মহিলা ৫ জন। এছাড়াও জেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে এনরিচমেন্ট বাগান সৃজন করা হয়েছে।
এসব উপকারভোগীদের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ায় ১ হাজার ৫শ ৮২ জন উপকারভোগী তাঁদের অংশের লভ্যাংশ পেয়েছেন মোট ৯ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৯শ ৭৮ টাকা।
উল্লেখ্য সামাজিক বনায়নকে কার্যকর ও সুযোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে বনায়ন আইনে সংশোধনী আনা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় সরকারী বন ভূমিতে বনায়নের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
বন বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের আওতায় ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৭৯,২৯৮ হেক্টর উডলট বাগান, ১০,৬২৬ হেক্টর কৃষি বন বাগান, ৬৬,৪৭২ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন করা হয়েছে। এছাড়া বিগত ৪ বছরে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড আওতাভূক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী ও নন-ম্যানগ্রোভ ২৯৫৫ হেক্টর ব্লক বনায়ন এবং সড়ক, রেলপথ ও বাঁধ সংযোগ সড়কে ২৬৪১ কি.মি. স্ট্রীপ বনায়ন করা হয়েছে। সৃজিত বাগানে প্রায় ৬ লক্ষ ২৭ হাজার উপকারভোগী সম্পৃক্ত আছে।
সারাদেশে ব্যাপক বনায়নের লক্ষ্যে সরকার মোট ১০ কোটি ১৫ লক্ষ ৪০ হাজার টি চারা বিক্রয় ও বিতরণ করেছে।
২০০৯ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সামাজিক বনায়নের আওতায় ১ কোটি ৯২ লক্ষ ৮০ হাজার ৪ শত ৬৯ ঘনফুট কাঠ, ২ কোটি ২ লক্ষ ৮১ হাজার ২৮ ঘনফুট জ্বালানী কাঠ ও ৫৫ লক্ষ ৫০ হাজার ২ শত ৯৫ টি বল্লী উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত কাঠ, জ্বালানী কাঠ ও বল্লী বিক্রয় করে ৭৭৫ কোটি ১৪ লক্ষ ১০ হাজার ৯ শত ৩৮ টাকা পাওয়া গেছে। ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮০ জন উপকারভোগীর মাঝে বিতরনকৃত লভ্যাংশের পরিমাণ ২৬১ কোটি ১৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৩৭ টাকা। টিএফএফ হিসেবে প্রায় ৭৪ কোটি ৭৯ লক্ষ ৪ হাজার ৪ শত ৭৭ টাকা জমা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সরকারী রাজস্ব হয়েছে ২৮৬ কোটি ২৪ লক্ষ ১২ হাজার ২ শত ৩২ টাকা।
তথ্যসূত্র: বনবিভাগ