মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা

হাতের মুঠোয় মোবাইল থাকায় দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে এবং ইচ্ছেমত সময়ে টাকা লেনদেনের সুবিধা লুফে নিচ্ছে মানুষ। আবার অন্যদিকে জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে এ মাধ্যমের অপব্যবহারও করছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গত জুন মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে দৈনিক গড়ে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার কোটি কোটি টাকার উপরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। এখন পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি নিলেও চালু করেছে ২০টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থাকলেও মোট লেনদেনের ৫৫ শতাংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেটের ৩৮ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যাংকের সর্বমোট সাত শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে।

২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দিলেও পরের বছর এ বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ম অনুযায়ী শুধু মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ মাধ্যমে লেনদেন করার কথা। তবে অনেক এজেন্ট নিয়ম না মানায় তাদের এজেন্টশীপ বাতিল করা হয়েছে। সঠিক পরিচিতি না থাকায় বেশ কিছু অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে পরিচালিত হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে চুক্তি করে এজেন্টের মাধ্যমে এ সেবা দিয়ে থাকে। সেবার বিপরীতে ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর ও এজেন্ট এই তিন স্থরে কমিশন ভাগ হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবা গ্রহণকারীর খরচ বেশি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আফ্রিকা ও এশিয়া অগ্রগামী। কেনিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের (পিএসডি) সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন, ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন ও পারসন টু পারসন লেনদেন, বেতনভাতা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও রেমিট্যান্সের অর্থ প্রেরণ হয়ে থাকে। জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এ সময়ে ক্যাশআউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১১ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। জুন মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে চার হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। বেতন ভাতা পরিশোধ হয়েছে ৬৬৬ কোটি টাকা। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে ২৩৩ কোটি টাকা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা, হুন্ডি ব্যবসা ও জঙ্গী অর্থায়ন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভাল এ ব্যবস্থাকে অনেকেই খারাপ কাজে ব্যবহার করছে। কোনো ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত রাখাটা কঠিন। তবে প্রতারণার মাত্রা ও পরিমাণ কতটা নিচে রাখা যায় সেটাই বড় বিষয়। প্রতারক চক্র যাতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য ব্যাংকগুলোর নজরদারির পাশাপাশি এজেন্টদের সচেতন থাকতে হবে।

বর্তমানে দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে ৫৭টি ব্যাংক থাকলেও মোবাইল ব্যাংকিং তেমন প্রসারিত হয়নি। আর মাসে যে পরিমাণ লেনদেন হয় তা যথোপযুক্ত নয়।