প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু এবং আ’লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অতীত ভূমিকা, বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রের কলা-কুশলীদের দুঃসময়ে সহায়তার জন্য বিদ্যমান ট্রাষ্ট ফান্ডটিকে আরো উন্নত করে স্থায়ী রূপ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বল্প খরচে মান সম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সুযোগ করে দিতে সরকার সেসব ক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডে দিয়েছে। আধুনিক সিনেপ্লেক্স যারা নির্মাণ করবেন তারা কিন্তু ট্যাক্স হলিডে পেতে পারেন। সিনেমা হলের আধুনিকায়নেও অনেক সুযোগ আমরা দিচ্ছি এবং এজন্য প্রয়োজন হলে আর্থিক সহায়তাও দেব।’
এ দেশে সিনেমা আন্দোলনের অতীত স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সহ আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হলো। যুক্তফন্টের সরকার গঠন হলো। তখনি কিন্তু এই বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ববঙ্গে) চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই কিন্তু উৎসাহিত করেছিলেন বাঙালিদের বাংলায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণের। তাই মুখ ও মুখোশ সিনেমাটি সেই ’৫৪ সালে প্রথম নির্মিত হয়। কারণ তখন পাকিস্তানীরা মনে করতো বাঙালিরা আবার কি চলচ্চিত্র বানাবে, বাঙালিরা কিছুই করতে পারবেনা এটাই ছিল তাদের মানসিকতা। মূলত, আমাদের ছেলেবেলা থেকেই দেখা এবং চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গেই যারা জড়িত এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গণে সম্পৃক্তদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং তিনি তাঁদের উৎসাহিত করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তখন এমন অবস্থা এই ভূখন্ডে তখন কিছ্ইু ছিলনা আমাদের পূর্ববঙ্গেও টাকাতেই সেখানকার মুরুভূমি থেকে নতুন শহর গড়ে উঠছিলো । আর এখানে সিনেমা তৈরী করে সেটা নিয়ে যাওয়া হত লাহোরে। যেখানে পূর্ববঙ্গের টাকাতেই তারা সিনেমা শিল্প গড়ে তুলেছিলো। কাজেই এখানে যদি কোন সিনেমা তৈরী হয়েছে তার নেগেটিভগুলো লাহোরে পাঠাতে হয়েছে সেটা সবধরনের প্রক্রিয়াকরণ শেষে যখন আবার ফেরত আনা হয়েছে সেটার সেন্সরশীপ করা হত এবং কাষ্টমস ক্লিয়ারেন্স নেয়া হত।
জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশবে একটি ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। যে সুযোগ তাঁকে দেয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। আমার বিশ্বাস, চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ এ নীতিমালার আওতায় উপকৃত হবেন। এছাড়া, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিএফডিসি’র কমপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ কমপ্লেক্স চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলী ও কারিগরি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণের কাক্সিক্ষত চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
বিএফডিসি’র অবকাঠামো ও ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কাজও এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএফডিসি স্কয়ার নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু হচ্ছে। এর ফলে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হবে। ৫৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে বিএফডিসি’র আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পথে। এ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের উপযোগী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাভারের কবিরপুরে ১৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি’ নির্মাণ (১ম পর্যায়) প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম সিটি গড়ে উঠবে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শ্যুটিং স্পট তৈরি করা হবে। এখানে আধুনিক ও বিশ্বমানের ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম আর্কাইভ’ গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা চলচ্চিত্র শিল্পে মেধাবী ও সুদক্ষ কর্মী সৃষ্টির জন্য ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। চলচ্চিত্রের মানোন্নয়নে চলচ্চিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্র বিষয়ে অধ্যয়ন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছি।
সরকার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে ৬৪টি জেলা ও ৪ উপজেলায় আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পে প্রতিটি কমপ্লেক্স মাল্টিপারপাস সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা চলচ্চিত্র বিপণনে সহায়তা করবে। এছাড়া, চলচ্চিত্রে সেন্সর ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সার্টিফিকেট ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।