ছেলেকে দেখিয়ে দিলেন মা

নাটোরে এবার একসঙ্গে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা দিয়েছিলেন মা শাহনাজ পারভিন (৪০) এবং ছেলে রাকিব আমিন সবুজ (২০)। পাসও করলেন একসঙ্গে। এমনকি এই বয়সেও ছেলের চেয়ে ভালো ফল করেছেন মা।

গতকাল রবিবার প্রকাশিত পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে, শাহনাজ পারভিন নাটোর মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছেন। আর ছেলে রাকিব নাটোর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৩.৬৭।

মা-ছেলে একসঙ্গে পাস করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শাহনাজ পারভিনের বাড়িতে ভিড় করছে এলাকাবাসী। তবে উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

শাহনাজ পারভিনের স্বজনরা জানায়, ১৯৯২ সালে তেলকুপি এলাকার রুহুল আমীনের সঙ্গে বিয়ে হয় শাহনাজের। এরপর পরিবার নিয়ে নাটোর শহরের মল্লিকহাটি মধ্যপাড়ায় বসবাস করছেন তিনি। বিয়ের পর ১৯৯৫ সালে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন শাহনাজ। এরপর অভাবের সংসারে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে এক ছেলে ও এক মেয়ের মা শাহনাজ স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে চাকরি নেন। কিন্তু লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝে ৪০ বছর বয়সে শাহনাজ ২০১৫ সালে নাটোর মহিলা কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হন। সেখান থেকেই এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

শাহনাজ পারভিন বলেন, ‘যখন বুঝলাম লেখাপাড়ার কোনো বয়স নেই তখন কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিই। ’ তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু অভাবের সংসারে সাংসারিক কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া খুব কঠিনই। তাই সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে লেখাপড়া আরো চালিয়ে নিতে চাই। ’

আর ছেলে রাকিব আমিন সবুজ নাটোর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কারিগরিতে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। সে বলে, ‘আমার রেজাল্টের চেয়ে মায়ের রেজাল্ট ভালো হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। তা ছাড়া মায়ের ফলাফল ভালো হওয়ার কারণে পরিবারের সবাই আনন্দিত। ’

শাহনাজ পারভিনের ভাই সাংবাদিক কাউছার আহম্মেদ বলেন, ‘বাবার অভাবের সংসারে অনেক আগেই বোনের বিয়ে হয়ে যায়। একদিন হঠাৎ করেই বোন বলেন, পুনরায় লেখাপড়া শুরু করবেন তিনি। এতে আমরাও সায় দিই। পরে নাটোর মহিলা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিই তাঁকে। ’

কাউছার আরো বলেন, বোন শাহনাজ স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চাকরি করে সংসার চালান। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশিই লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। কলেজের অধ্যক্ষকে বলে ফরম পূরণের টাকাসহ অন্যান্য ফি কম দিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তিনি। তাঁর অদম্য এই ইচ্ছা শক্তিকে আরো দূরে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তাঁরা।

শাহনাজ পারভিনের স্বামী রুহুল আমীন বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে একসঙ্গে পাস করায় পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অভাবের সংসারেও যে তাঁরা পাস করেছে এ জন্য ভালো লাগছে। ’ তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী চাকরি করার পর অবসর সময়ে পড়ালেখা করতেন। স্ত্রী ও ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। তবে সহযোগিতা পেলে তাঁরা আরো ভালো করতে পারবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

এ বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, ‘পড়াশোনার কোনো বয়স নেই। তাঁর উদাহরণ শাহনাজ বেগম এবং সবুজ। তাদের যে অদম্য মনোবল তারা আরো এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যাশা করি। সরকারি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করলে তাদের সবাইকে সহযোগিতা করা হবে। ’