চোখের আলো নেই, কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে ওরা শিক্ষার আলো জ্বেলে। কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করেছেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষাতেও। পাবনার এই সাত দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী শ্রুতি লেখকদের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অন্য সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠিকই সফল হয়েছেন ওরা। পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তায় পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল এবং পাবনা কলেজ কেন্দ্র থেকে এই শিক্ষার্থীরা মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সাফল্য অর্জন করায় তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন পাবনার সর্বস্তরের মানুষ। সামর্থ্যবানদের প্রতি তারা আহ্বান রেখেছেন, আলোকিত এই দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের এগিয়ে চলার পথে তারা যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের রবিউল ইসলাম, নরসিংদীর পেতিপলাশি গ্রামের মো. আবদুল্লাহ, ঢাকার সাভার উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের
মো. রবিউল করিম রবি ও পাবনার সুজানগর দুর্গাপুরের মো. মুনসুর আলী। তারা সবাই পরীক্ষায় চার দশমিক ৫০ পয়েন্ট পেয়েছেন। এ ছাড়া মাদারীপুরের বাগমাড়া গ্রামের সুমন আহম্মেদ চৌধুরী পেয়েছেন চার দশমিক ২৫ পয়েন্ট, পাবনার চাটমোহর উপজেলার গৌরনগর গ্রামের মাহবুবুল আলম পেয়েছে চার দশমিক ২০ পয়েন্ট এবং সাঁথিয়া উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মো. জামিল হোসেন পেয়েছেন চার দশমিক ১৭ পয়েন্ট। দৃষ্টিহীন এই সাত শিক্ষার্থী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে বিনা খরচে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। এর আগে এসএসসি পরীক্ষাতেও এই ৭ শিক্ষার্থী ভালো ফল করে সবার নজর কেড়েছিলেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাহবুব আলম সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশের সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সহায়তা করাই আমার জীবনের লক্ষ্য।’ মাহবুব বলেন, ‘শ্রুতি লেখকের সহায়তায় অন্য শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রেই আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়। অনেক সময় আমরা সঠিক বললেও শ্রুতি লেখক লিখতে ভুল করে বসেন। এতে মার্কস কমে যায়।’
পাবনা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবুল হোসেন সমকালকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতির। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এ সুযোগ নেই। বর্তমানে পরীক্ষার জন্য শ্রুতি লেখকের প্রয়োজন হয়। অথচ তাদের সম্মানী দেওয়া দূরের কথা, লেখাপড়া করার নূ্যনতম ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই দরিদ্র এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর। তার পরও থেমে থাকেনি তাদের শিক্ষাজীবন। তিনি বলেন, এই সাত পরীক্ষার্থীর মতো আরও ৫২ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে নবম শ্রেণিতে ছয়জন, দশম শ্রেণিতে সাতজন, চলতি একাদশ শ্রেণিতে পাঁচজন, এমএতে দুইজনসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শ্রেণিতে লেখাপড়া শিখছেন।
পাবনার শিক্ষাবিদ পাবিপ্রবি কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম আবদুল আলীম সমকালকে বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জকে আমাদের সহায়তা করা প্রয়োজন। তাদের এই ফল প্রশংসার দাবিদার।’
পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো সমকালকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ফল আশাব্যঞ্জক। সরকার এদের সম্ভাব্য বিভিন্ন সহায়তা করবে।’