মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে শস্য সংগ্রহ

কৃষকদের ন্যায্য পাওনা ও ভোগান্তি দূর করতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ কৃষকদের সুবিধার জন্য এ পদ্ধতি চালু করেছে। এ পদ্ধতিতে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য থাকবে না। কৃষকরা তাদের খাদ্যপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাবেন। কৃষকদের পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংয়ের (ইওয়াই) কারগিরি সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসটি) প্রকল্পের মাধ্যমে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে এ খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়েছে। শেরপুর ও নাটোরে পাইলট কর্মসূচীটি প্রথম চালু করা হয়েছে। প্রকল্পটি সফল হলে পরে সারাদেশেই চালু করা হবে।

এলআইসিটি উপ-প্রকল্প পরিচালক তারেক বরকতউল্লাহ জানান, উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারটির কার্যকারিতা দেখার জন্য শেরপুরের নালিতাবাড়ি ও নাটোরে খাদ্য সংগ্রহ পদ্ধতির ডিজিটাইজেশনের পাইলটিং হচ্ছে। এর আগে পাইলটিং কার্যক্রম চালু উপলক্ষে আগামী ৯ জুলাই কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদফতর ও এলআইসিটি প্রকল্পের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম নালিতাবাড়ি ও নাটোর সফর করেছে। নাটোর ও নালিতাবাড়িতে পাইলট প্রকল্পের পরীক্ষা করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে সারাদেশে ডিজিটাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কৃষকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন জরুরী হয়ে পড়েছে। ডিজিটাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে সারাদেশে বিভিন্ন বিভাগে যেভাবে টেন্ডার করা হয়, অনেকটা একই পদ্ধতিতে ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে উন্নয়নকৃত এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটির মাধ্যমে উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দকৃত খাদ্যের বিভাজন অনলাইনে সম্পাদন করা যাবে। এছাড়া কৃষক ও চালকল মালিকদের রেজিস্ট্রেশন ও আবেদনও নেয়া হবে অনলাইনে। মিল মালিকদের আগ্রহপত্র (ইওআই) অনলাইনে করা ও ওয়েবসাইটে তথ্য জানানোসহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিল মালিক এবং কৃষকের মোবাইলে ধান-চালের চাহিদা, সরবরাহের তারিখ জানিয়ে খুদেবার্তা প্রেরণের ব্যবস্থা থাকবে। এ পদ্ধতির মধ্যে তৃতীয়পক্ষের কোন হাত থাকবে না।

এ বিষয়ে সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য থাকবে না। একজন কৃষকের রেজিস্ট্রেশন, ধান-চালের মূল্য জানা, সরবরাহের পরিমাণ ও নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয়ার তথ্যসমূহ অনলাইন এবং খুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকছে। ফলে একজন কৃষক কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি তার উৎপাদিত ধান ও চাল সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবে এবং কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাবে।

এদিকে প্রকল্পের উপ-পরিচালক তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, এলআইসিটি প্রকল্পের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার (এনইএ) প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন এনইএ’র আইটি রোডম্যাপের অংশ। খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও ডাটা আপডেটে এলআইসিটি প্রকল্প ও খাদ্য অধিদফতর একযোগে কাছ করছে। খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের গোটা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকার প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহ করে, যার মধ্যে আট লাখ টন চাল ও প্রায় সাত লাখ টন ধান রয়েছে। খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করা হলে কৃষক এবং মিল মালিকদের কাছ থেকে এ বিপুল খাদ্য সংগ্রহের গোটা প্রক্রিয়ায় যেমন স্বচ্ছতা আসবে, একই সঙ্গে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। তাদের খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা কারসাজি করে আসছে। এতে চরমভাবে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কৃষকরা যাতে ক্ষতির শিকার না হন তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এ উদ্যোগকে খাদ্য মন্ত্রণালয় স্বাগত জানিয়েছে।