কাসাবায় হাসছেন কৃষকরা

মিরসরাইয়ের ন্যাড়া পাহাড়ে কাসাবা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। ইতিমধ্যে স্থানীয় কৃষক কাদের, মুক্তার, সঞ্জিতসহ অনেক কৃষক কাসাবা চাষ করে আর্থিক সচ্ছলতা পেয়েছেন। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ঘেড়ামারা এলাকায় এ বছর প্রায় ২০০ একর পাহাড়ে কাসাবা চাষ করা হয়েছে। এটি দেখতে শিমুল গাছের মতো। মাটির নিচে হয় কাসাবা। উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কাসাবা হচ্ছে কন্দ জাতীয় ফসল। বৈজ্ঞানিক ভাষায় এটির নাম কাসাবা হলেও মিরসরাইয়ে এটি কাঠ আলু নামে পরিচিত। সব ধরনের জমিতে কাসাবা চাষ করা গেলেও পাহাড়ে এটির ফলন বেশি হয়। আগে মিরসরাইয়ের ওইসব পাহাড়ে আধা, হলুদসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করলেও তাতে উৎপাদন খরচ পড়ত বেশি। কিন্তু উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি বলে কৃষক এখন পাহাড়ে কাসাবা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কাসাবা চাষি সঞ্জিত বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে কাসাবা রোপণ করা হয়। কাসাবার বংশবিস্তার সাধারণত আট থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে স্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে করা হয় । এটি ৫ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বিগত ১০ বছর ধরে আমি এটি চাষ করে আসছি। এ বছর ৬ একর জমিতে কাসাবা চাষ করেছি। দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ৪০-৫০ টনের মতো কাসাবা হবে। এক বছরের মধ্যে কাসাবা বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। প্রতি টন কাসাবা ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি।

সঞ্জিত জানান, তার দেখাদেখি এখন করেরহাটে প্রায় ২০০ একর পাহাড়ে কাসাবা চাষ করা হয়েছে। অল্প পুঁজিতে লাভজনক বিকল্প খাদ্য কাসাবা সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের বুঝাতে পারলে কৃষকদের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি হবে। কাসাবা বিক্রির উপযোগী হলে প্রাণ, স্কয়ারসহ বড় বড় কোম্পানির লোকরা এসে এটি ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যায়। এতে করে এটি বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া লাগে না। শুধু সঞ্জিত নয়, তার মতো অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে কাসাবা। কাসাবা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এলাকার অনেক কৃষক।

কাসাবা চাষি কাদের, মোসলিম বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রাণ, স্কয়ার গ্রুপ আমাদের উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ দেয়। কাসাবা কি সেটা এখনও অনেকেই জানে না। স্থানীয়রা এটির ফলন সম্পর্কেও তেমন অবগত নন। অথচ বড় বড় কোম্পানিগুলো কাসাবা নিয়ে গ্গ্নুকোজ, চিপস বানাচ্ছে, ওষুধের কাঁচামালও তৈরি করছে। রহমান কেমিক্যাল ও প্রাণ কোম্পানি বর্তমানে এখানকার উৎপাদিত কাসাবা কিনে নিয়ে যায় বলে তিনি জানান। কাদের অভিযোগ করেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে কাসাবা চাষ নিয়ে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না। কাসাবার রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের জন্য বড় বড় কোম্পানি কৃষকদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দেয়।

জানা গেছে, প্রায় ১২-১৪ বছর পূর্বে ঘেড়ামারা এলাকায় এক ব্যক্তি বিদেশ থেকে কাসাবার বীজ নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তিনি করেরহাট এলাকায় এটির চাষ শুরু করেন। কাসাবা বিক্রির উপযোগী হলে তিনি ঢাকায় অবস্থিত রহমান কেমিক্যাল নামের একটি কারখানায় সেগুলো সরবরাহ করতেন। তখন থেকে রহমান কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কৃষকদের বীজ সরবরাহ করলে করেরহাট পাহাড়ে আবাদ শুরু হয়। আর এভাবে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকে ঘেড়ামারা পাহাড়ে কাসাবা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, করেরহাটের ঘেড়ামারা পাহাড় জুড়ে চাষ করা হয়েছে কাসাবা। কাসাবা গাছ দেখতে অনেকটা শিমুল গাছের মতো। বর্ষার শুরুতে কৃষকরা কাসাবার চারা লাগিয়ে পরিচর্র্যা করেছেন। শ্রমিকরা চারা গাছগুলোর গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে ঝুরঝুরে করে দিচ্ছেন, আগাছা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। এ সময় শ্রকিরা জানান, নরম মাটিতে কাসাবার ফলন বেশি হয়। এক বছরের মধ্যে চারাগুলো ফলন দেওয়া শুরু করে। এরপর সারা বছরই গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়। একটি গাছ কমপক্ষে তিন বছর ধরে ফলন দেয়। মোটা শেকড়ের মতো মূলই (দেখতে মিষ্টি আলুর মতো) হচ্ছে কাসাবা। ওপরের চামড়া আলাদা করে এটি কাঁচা খাওয়া যায়। কাঁচা খেতে এটি পানি যুক্ত ও আঁশ জাতীয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘কাসাবায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ফসল এই কাসাবা। কাসাবা থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায় যা দিয়ে রুটি, বিস্কুট, চিপস, গ্গ্নুুকোজসহ নানা খাদ্য তৈরি করা যায়। এছাড়া সাগু, বিয়ার, পোলট্রিফিড, বস্ত্র ও কাগজ তৈরি শিল্পে প্রচুর কাসাবা ব্যবহার হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাসাবা বাগানে সাধারণত হোয়াইড গ্রাব, নেমাটোড, উইপোকা এবং ইঁদুর আক্রমণ বেশি করে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ ব্যবহার করলে এসব রোগ ও পোকা দমন করা যায় সহজে।’