বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গি মোকাবিলা হবে একসঙ্গে। বাংলাদেশ কোনো তথ্য পেলে ভারতের তদন্তকারীদের জানাবে। পাশাপাশি ভারতের তদন্তকারীরাও কোনো তথ্য পেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশকে জানাবে। প্রতিনিয়ত তারা তথ্য আদান-প্রদান করবে।
গতকাল সোমবার পুলিশ সদর দফতরে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) তিন সদস্য ও কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) তিন সদস্য যৌথভাবে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আড়াই ঘন্টার এই বৈঠকে দুই দেশ তালিকা আদান-প্রদান করে।
এর আগে এনআইএ’র তিন সদস্যের একটি টিম সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছে। ঢাকায় পৌঁছেই দলটি সোজা চলে যায় পুলিশ সদরে। এর আগে এসটিএফ’র তিন সদস্য গত তিন দিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের এই দুটি গ্রুপ একসঙ্গে বৈঠক করে। পুলিশ সদরের ইন্টেলিজেন্স এন্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্সের এআইজি মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক ইত্তেফাককে বলেন, ‘ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তিন সদস্যের একটি টিম আজই (গতকাল) বাংলাদেশে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। তারা একটি তালিকা আমাদের দিয়েছে। আমরাও আমাদের কাছে থাকা তথ্য তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। এর আগে এসটিএফের টিমও আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। তাদের সঙ্গেও আমরা তথ্য শেয়ার করেছি।’
গত বছরের ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। এ হামলায় নিহত হন দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক। জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনা নেতৃত্বে অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের ১২ ঘণ্টার জিম্মি-সংকটের অবসান হয়। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়। এ পর্যন্ত ২৩টি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
জানা গেছে, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে ভারতের দুটি দলই সোহেল মাহফুজের ব্যাপারে আলোচনা করেছে। গত ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বানানোর সময় দুজন নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সোহেল মাহফুজ হলেন ফেরারি আসামি। মামলার অভিযোগপত্রে তার নাম রয়েছে। ভারতে সোহেল মাহফুজ হাতকাটা নাসিরুল্লাহ নামে পরিচিত ছিলেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ানটেড এই সোহেল মাহফুজ।
এআইজি মনিরুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে এনআইএ ও এসটিএফের ৬ সদস্য আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করেছেন। তারা পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির তত্পরতা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। পরে এ সংক্রান্ত তথ্যবিনিময় হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পাশাপাশি ভারতের কোথায় কোথায় জেএমবির তত্পরতা আছে, তারা কতটা সংগঠিত, আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু কী এ সব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ ভারতে পালিয়ে থাকা জঙ্গিদের একটি তালিকা তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সোহেল মাহফুজ মূলত ভারত থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদের উপকরণ সংগ্রহের কাজ করতেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশের পুলিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদের জোগানদাতার নাম পেয়েছে। এই নামগুলো ও তাদের ভূমিকা সম্পর্কে ভারতীয় পুলিশকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ভারতও কিছু জঙ্গির ব্যাপারে তথ্য দিয়ে অভিযান চালাতে বলেছে। ভারতের এই দল দুটি ফিরে গেলে বাংলাদেশ থেকে একটি দল ভারতে যাবে।
গত ৭ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম গত শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে জঙ্গিদের ধরপাকড় শুরু হলে সোহেল মাহফুজ ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানকার পুলিশ ২০১৪ সালে পুরস্কার ঘোষণার পর সে বাংলাদেশে চলে আসে। বেশির ভাগ সময় সোহেল সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করত। সোহেল মাহফুজ ভারতে জেএমবির আমির ছিল বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।