বাংলাদেশ থেকে যারা পর্বত আরোহণে যাচ্ছেন তাদের কনিষ্ঠতম মৃদুলা আমাতুন নূর। তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে পর্বত আরোহণ করছেন। শুধু পর্বত আরোহণ নয়, তিনি সার্ফিং, স্কুভা ড্রাইভিং, প্যারাগ্লাইডিংও করেন। তার স্বপ্ন, সেভেন সামিট আরোহণ করা আর এমবিবিএস শেষ করে ভালো চিকিত্সক হওয়া। পড়াশোনাতেও সমান দক্ষ তিনি। একই সঙ্গে সবকিছু দারুণভাবে সামলে চলেছেন এই টগবগে তরুণী।
ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৃদুলা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করতাম। সিআইডি গেমস, পুলিশ গেমস খেলতে পছন্দ করতাম। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে পর্বতারোহণ খুব দেখতাম। ভাবতাম আমিও একদিন এমন চ্যালেঞ্জিং কিছু করবো। আমিও পর্বত আরোহণ করবো। ’
আমাদের পরিবারের সদস্যরাও ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। একবার সবাই মিলে দার্জিলিং গেলাম, তো আরেকবার ভুটান যাই। সে সময় হিমালয়ের কাছাকাছি যাই আর সেখানে ওঠার আগ্রহটা আরো বাড়তে থাকে। তখন বাসায় জানালাম যে—‘আমি প্ল্যান করে হিমালয়ের চূড়ায় উঠতে চাই। সমতল ভূমিতে বেড়িয়ে আমি তৃপ্ত নই। আমি পাহাড়ে উঠতে চাই।’ আমি প্রথম প্যারাগ্লাইডিং করি নেপালের অন্নপূর্ণা পাহাড়ে। সেটাই আমার প্রথম অ্যাডভেঞ্চার ছিল ।
এরপর আমি দেশে খুঁজতে থাকি। আমার দেশে কোথায় কি আছে। সার্ফিংয়ের সুযোগ পেলাম কক্সবাজারে। তখন সার্ফিং করি। সেখানে প্যারাসেলিং এর জন্যে তাগাদা দিতে থাকি। বললাম, বাংলাদেশে এতো বড় সমুদ্র সৈকত, সেখানে প্যারাসেলিং খুলছেন না কেন। তারপর প্যারাসেলিং চালু হলে আমি প্যারাসেলিং করি। এরপর বাকি থাকে ট্রেকিং। তখন মনে মনে ভাবি আমি অবশ্যই একদিন এভারেস্ট যাবো। ট্রেকিং করি চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটিতে। আবার নেপালে চলে যাই, এভাবে নেপাল ও ভারতে কিছু পর্বতারোহী বন্ধু তৈরি হয়। তারা আমার আগ্রহ দেখে সহযোগিতা করে। মৃদুলা বলেন, এরপর দার্জিলিং এর কাঞ্চনজংঘা যাওয়া হয়। কাঞ্চনজংঘা যে কত সুন্দর তা বলে বোঝানো যাবে না। মৃদুলা বলেন, আমাদের দেশের যারা ট্র্যাকার তারা কেবল ট্রেকিং করে। কিন্তু আমি সেই ট্রেকিং এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম না। আমি স্কুভা ড্রাইভিং শিখি সেন্ট মার্টিন থেকে। আমাদের দেশে স্কুভা ড্রাইভিং এর প্রধান মুজিবুর রহমান অনেক আগে থেকেই আমার ফেসবুকে যুক্ত ছিলেন। তবে ওনার সঙ্গে আমার কখনো যোগাযোগ হয়নি। উনিই নাকি আমার এসব দেখে ওনার স্যারকে জানান যে, এই মেয়েটি একসঙ্গে ট্রেকিং, সার্ফিং ও স্কুভা ড্রাইভিং করে। তখন স্কুভা ড্রাইভিং এর হেড অফিস জার্মান থেকে আমাকে একটা পতাকা পাঠায়, স্কুভা ড্রাইভিং এর স্টিকার, আইডি কার্ডও আমার জন্যে পাঠায়।
ওদিকে আমার বিদেশি পবর্ত আরোহী বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করি যে, পরের বছর যে করেই হোক এভারেস্টে যেতেই হবে। এর জন্যে প্রস্তুতি দরকার। বন্ধুদের সহযোগিতায় হিমাচল প্রদেশের মানালির অটল বিহারি বাজপেয়ী ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিএফ শাহীন কলেজে পড়াকালীন আমি ক্যাডেটে ছিলাম। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর এর ট্রেনিং ছিল। সেটা আমার অনেক কাজে দিয়েছে।
মানালিতে যখন ট্রেনিংয়ে যাই তখন পরিবারে কেউ রাজি ছিল না। বাবা-মাকে অনেক বুঝিয়ে ইন্ডিয়ার মাউন্টেনিয়ারিংয়ের আমন্ত্রণপত্রটা বাবার হাতে দেই। সেটা দেখে বাবা খুশি হয়। পরে বাবা রাজি হন। পরবর্তীতে আমার লক্ষ্য সেভেন সামিট জয় করা। এভারেস্টে আমি ২২ হাজার ফুট উঠেছি। ৬ হাজার ফুট বাকি ছিল। আমার সেবার অসুস্থতা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা হয়নি। সেভেন সামিটের অন্য পিকগুলো এই উচ্চতার চেয়ে কম।
মৃদুলা বলেন, ট্রেকিংকালে অনেক সময় তুষারধস হয়। পাহাড় থেকে বরফের খণ্ড ধসে পড়ে। প্রথম প্রথম সেটা দেখে ভয় পেতাম। এখন আর পাই না।
মৃদুলার বেড়ে ওঠা ঢাকার মগবাজারে। দু’ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবা আবু হেনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আর মা ফরিদা আক্তার পেশায় ব্যাংকার। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি ও বিএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি।