শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর ও এ সফরে উভয় দেশের মধ্যে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই দেশ দুটোর পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের ও শ্রীলঙ্কা দুই দেশের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যগত সাজুয্য। রয়েছে বাণিজ্য সম্পর্কও। এ বাণিজ্য বছরে আট কোটি ডলারের মতো। এই বাণিজ্য বাড়াতে চলতি বছরের মধ্যেই মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার জন্য ঐকমত্য হয়েছে দুই দেশ। এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম এ জাতীয় কোনো চুক্তি সম্পাদন। এই চুক্তির বাস্তবায়ন হলে শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি বাড়বে, কমবে বাণিজ্য ঘাটতিও। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের এই ঐতিহাসিক সফরে বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমাদের বিশাল এক সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী দেশ। দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বছরে প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের বাণিজ্য হচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শ্রীলঙ্কা থেকে ৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে ওই দেশে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘাটতি বাণিজ্য ১ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে তা অনুক‚লে আনতে হলে দেশটির বাজারে তৈরি পোশাক, কাগজ, ওষুধ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, পাটজাতপণ্য এবং কৃষিজাতপণ্য বিশেষ করে আলু রপ্তানি বাড়ানো প্রয়োজন। এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। যদিও চুক্তি না থাকায় শুল্ক ও অশুল্কজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি বাণিজ্য তেমন বৃদ্ধি পায়নি। এ ক্ষেত্রে সরকার পর্যায়ে উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষণীয় ছিল। আশার কথা হলো সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। দু’দেশের অর্থ-বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হতে যাচ্ছে। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক সফরে। তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখন যেসব শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে, তা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে অপসারণ করা যাবে। চলতি বছরের সুবিধাজনক সময়ে এই চুক্তিটি করা হতে পারে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে যে ১৪টি দলিল সই হয়েছে, তার সাতটিই হচ্ছে কৃষি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবিষয়ক। তার মধ্যে আছে কৃষি খাতে সহযোগিতা, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও ইনভেস্টমেন্ট অব শ্রীলঙ্কার মধ্যে সমঝোতা স্মারক, দুই দেশের স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, দুই দেশের শিপিং করপোরেশনের মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা, অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইল ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। আঞ্চলিক সন্ত্রাস দমনেও দুই দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সিরিসেনার সফর দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উভয় দেশ আঞ্চলিক শান্তি ও বিশ্বশান্তির প্রশ্নে অভিন্ন ভূমিকা পালনে এ সফর উৎসাহ জোগাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আমরা আশাবাদী যে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফর দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে মজবুত করবে, একই সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে সুদৃঢ় করে উভয় দেশের অগ্রগতিকে ত্বরানি¦ত করতে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটি নবযাত্রা সূচিত হবে বলেই আমরা মনে করি। এই সফরে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে ও যেসব বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তৎপর হলেই কাক্সিক্ষত সুফল লাভ সম্ভব হবে।