নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে ধরলা সেতু

লালমনিরহাট জেলা সংলগ্ন ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর ধরলা সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সেতুটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই মাসের যে কোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করতে পারেন। আর ওইদিন থেকেই সেতুটি জনগণ ও যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বর্তমানে সেতুটির উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুনছে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দারা। কারণ এ দিন থেকেই নদীটি পারাপারে দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে এ দুই জেলার মানুষজন।

গত ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটে সফরে এসে ধরলা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে নিজেই সেতুটি উদ্বোধন করবেন বলে মত ব্যক্ত করেন। বিষয়টি একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর সেতুটি ডিসেম্বরেই উদ্বোধন করার বিষয়টি মাথায় রেখেই দিনরাত অবিরাম সেতুর কাজ করে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। বেশ দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলেছে নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৯৫০ মিটার দৈর্র্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্তের পিসি গার্ডার বেষ্টিত এ সেতুটির ইতোমধ্যেই ৮৭ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বেড়ে গেলেও যাতে কাজ বন্ধ না হয় সেজন্য স্থাপন করা হয়েছে উপর থেকে কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্রেন।

এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নে সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালে সিমপ্লেক্স এবং নাভানা কনস্ট্রাকশন গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে চুক্তি সম্পাদিত হয়। নদী শাসন, অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ ও মূল সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৯১ কোটি ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২৩ টাকা ৫৮ পয়সা। সেতুটির ১৯টি স্প্যান, ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মিমি ব্যাসের ২৪০টি পাইল, ১ হাজার ৭৫০ মিটার তীর সংরক্ষণ আবরণ, ৩ হাজার ৬৩০ মিটার প্রটেকশন অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দুই জেলার মানুষের প্রাণের দাবি এই সেতুটি চালু হলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার অন্তত ৩০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। এ ক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মানুষ উপকৃত হবেন সবচেয়ে বেশি। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে নতুন করে আরেক ধাপ প্রাণ ফিরে পাবে লালমনিরহাট শহরসহ সদরের বড়বাড়ী। শুধু তাই নয়, বিভাগীয় শহর রংপুরসহ সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে অনেকটাই সহজতর। অন্যদিকে ভুরুঙ্গামারীর বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দরের মালামাল পরিবহনেও সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি সেতুটি চালু হলে বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামসহ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ এবং ভারতের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার কৃষিজাত পণ্য পরিবহনেও সেতুটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে জানান এসব জেলার মানুষজন।

এ নিয়ে কথা হলে ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা আনছার মেম্বার, মৌসুমী ব্যবসায়ী সামসুল আলম এবং কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, এই সেতুটি চালু হলে এখানকার কৃষকরা সহজেই তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কম খরচে বাজারজাত করতে পারবে। পাশাপাশি উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

এদিকে আগামী ডিসেম্বরে সেতুটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এমন তথ্য উড়িয়ে না দিলেও কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ডিসেম্বরের আগেই সেতুটি চালু করার জন্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, ধরলা সেতুটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এর নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। এই সেতু নির্মাণের দাবিতে এলাকায় বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালিত হয়।