পুঁজিবাজারে লেনদেন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৫ কোটি ডলার যা আগের বছরের তুলনায় ১৪৭ শতাংশ বেশি। লেনদেনের এ বৃদ্ধি এশিয়ার প্রধান শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বেড়েছে ৪২ শতাংশ। হংকং এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খুবই লাভজনক। এখানে লভ্যাংশ আয়ও বেশি, মূলধন আয়ও অনেক বেশি। তাই ধীরে ধীরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে ভিড়তে শুরু করেছেন। তাছাড়া দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও বাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। তাই বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়ছে।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে পুঁজিবাজারে মোট বিদেশি লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বেড়েছে ৩৭৮ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি লাভজনক। তাই বিনিয়োগকারীদের এখানে আগ্রহ রয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বাড়ছে। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক বাড়লেও মোট লেনদেন এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম। লেনদেন আরো বাড়াতে হলে বাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ভালো কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে এমনিতেই বিনিয়োগকারী আসবে। আর ভালো কোম্পানির সংখ্যা না বাড়লে সূচক বা লেনদেন কোনোটাই খুব বেশি বাড়বে না।
প্রায় এক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক গতিশীলতা রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এক বছর আগেও লেনদেন ছিল গড়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। সেখানে এখন গড়ে সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। চলতি মাসে লেনদেন হচ্ছে সাতশ কোটি টাকা। ডিএসইর সার্বিক মূল্য সূচকও এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১ হাজার ২৩৩ পয়েন্ট। মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধসের কারণে সূচক অনেক কমে গিয়েছিল। অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম তখন তলানিতে নেমে আসে। এখনো অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে কম। ফলে বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে বাজারে অতিমূল্যায়িত কিছু শেয়ারও রয়েছে। এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লেনদেন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ, ভারত ও হংকংয়ের পরে এগিয়ে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তাইওয়ান স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ। মালয়েশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। থাইল্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়েছে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন কমেছে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।
এছাড়া প্রধান এসব স্টক এক্সচেঞ্জ ছাড়া অন্য দেশগুলোতে লেনদেন খুব একটা বাড়েনি, কমেওনি। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাজার মূলধন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এপ্রিলে বাজার মূলধন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে। আর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়া হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এবং টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।