বিনিয়োগ বাড়াতে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদ হ্রাস

দেশে ব্যবসাবাণিজ্য স্থবিরতার কারণে ব্যাংকে টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে। ঋণের চাহিদা না থাকায় আমানতের সুদের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। ফলে বেশির ভাগ ঋণের সুদহার কাগজে কলমে সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে গেছে। অথচ কৃষি ও পল্লীঋণের সুদের হার এখনো ১০ শতাংশ রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান বাড়াতে তাই কৃষি ও পল্লীঋণের সুদের হার কমিয়ে ১০ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, অন্য যেকোনো ঋণের তুলনায় কৃষিঋণের আদায় ভালো। বেশির ভাগ কৃষককে যথাসময়ে ঋণ বিতরণ করায় কৃষিঋণের খেলাপি হারও অনেক কম। বলা চলে সারা বছরই কোনো-না-কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পার করার পরেও বেশির ভাগ কৃষক কষ্ট করে হলেও ঋণ পরিশোধ করায় কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের হার গত ৩১ মে শেষে হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের কৃষি খেলাপি ঋণের হার মাত্র ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর সরকারি ব্যাংকগুলোর কৃষি খেলাপি ঋণের হার ২২ শতাংশ। ঋণ আদায় কাক্সিক্ষত হারে হওয়ায় এবং কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ায় কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ৩১ মে শেষে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ১৯ হাজার ৫৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বাড়ছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এবার শস্য ও ফসল চাষের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট ছাড়াই একজন কৃষক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিতে পেরেছেন। আগে এ সীমা ছিল দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাধ্যতামূলক নির্ধারিত কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বিতরণ করতে হবে। তবে নেটওয়ার্ক অপ্রতুলতার কারণে বিদেশী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে না বলে ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি ও পল্লী অর্থনীতি খাতের অবদান প্রায় এক পঞ্চমাংশ। আর শ্রমজীবী কর্মশক্তির প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানে এ খাতের অবদান ৪৫ শতাংশের মতো। রফতানিতেও কৃষি খাতের ভূমিকা বাড়ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে ব্যাংকিং ও আর্থিক বাজারের ঋণ জোগান রয়েছে সার্বিক ঋণ জোগানের তিন শতাংশেরও নিচে। নীতিমালা অনুযায়ী, এবার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায়ও ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে এজেন্টদের কমিশন বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্ধারিত সুদের অতিরিক্ত দশমিক ৫০ শতাংশ আদায় করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আম ও লিচুর পাশাপাশি পেয়ারা উৎপাদনেও সারা বছর ঋণ দেয়া যাবে। এ ছাড়া গত জুলাই থেকে কৃষি ও পল্লীঋণের নির্ধারিত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
কৃষিঋণের বিতরণ বাড়াতে এক বছরের মাথায় কৃষি ও পল্লীঋণের সুদের হার আরো এক শতাংশ কমিয়ে সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী পয়লা জুলাই থেকে এ খাতে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিতে পারবে। কৃষকদের মধ্যে ঋণ সহজলভ্য করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ জুন কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বছর আরো ১ শতাংশ কমানো হলো। নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, গত বছর সার্কুলারের মাধ্যমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদ হারের ঊর্ধ্বসীমা ১০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। এখন কৃষি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি ও প্রকৃত কৃষকের কাছে ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে আমানত ও ঋণের সুদ হারের নি¤œমুখী প্রবণতা বিবেচনায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদ হারের ঊর্ধ্বসীমা ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৯ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হলো।