বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জীবন রক্ষাকারী বাংলাদেশি ওষুধের চাহিদা বাড়ছেই। ওষুধ কিনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চুক্তি করেছে। বর্তমানে ৫৪টি কোম্পানির তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১২৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ২০১৬ সালে ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৪৭ কোটি ৫ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ৭০ ভাগ ওষুধই আমদানি করা হতো। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কারখানাগুলোয় ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ওইসব দেশ থেকে বাংলাদেশি ওষুধ রপ্তানির অনুমোদনও মিলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, বাংলাদেশ থেকে জেনিরিক প্রডাক্টের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধের মান বিশ্বের উন্নত দেশের মানের মতো হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, বর্তমানে দেশে ২৬৬টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৪০০ ধরনের ওষুধ ২৪ হাজার ব্র্যান্ডনেমে বাজারে বিক্রি হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অ্যালোপ্যাথিক কারখানা ছাড়াও ২৬৭টি ইউনানী, ২০৭টি আয়ুর্বেদিক, ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক, ৩২টি হার্বালসহ ৮৫১টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৮৩৩ জেনিরিকের ৩৮ হাজার ৪৭৩ ব্র্যান্ডের ওষুধ ও মেডিক্যাল ডিভাইস উৎপাদন করছে। দেশে উৎপাদিত এসব ওষুধ বিক্রি করার জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার লাইসেন্সধারী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান (ফার্মেসি) রয়েছে। দেশেই প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ওষুধের মার্কেট রয়েছে। এ ছাড়া ৫৪টি প্রতিষ্ঠান আমেরিকা-ইউরোপসহ বিশ্বের ১২৭টি দেশে রপ্তানি করছে। প্রতিবছরই বাড়ছে রপ্তানির পরিমাণ।
ইউরোপের যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ইতালিসহ ২৬টি; এশিয়ার সৌদি আরব, ইরান ও মালয়েশিয়াসহ ৩৭টি; সেন্ট্রাল অ্যান্ড সাউথ আমেরিকার ২১টি, নর্থ আমেরিকার ৪টি; অস্ট্রেলিয়ার ৬টি; আফ্রিকার ৩৪টি দেশে এ ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ২ হাজার ২৪৭ কোটি ৫ লাখ টাকার ওষুধ রপ্তানি করা হয়। ২০১৫ সালের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ বাড়ে ১ হাজার ৪১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এটি এর আগের বছরের প্রায় তিনগুণ।
২০১১ সালে ৮৭টি দেশে ৪২১ কোটি ২২ লাখ টাকার ওষুধ এবং ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার কাঁচামালসহ ৪২৬ কোটি ১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। ২০১২ সালে ৮৭টি দেশে ৫৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার কাঁচামালসহ ৫৫১ কোটি ২ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। ২০১৩ সালে ৮৭টি দেশে ৬০৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ওষুধ এবং ১৬ কোটি ৫ লাখ টাকার কাঁচামালসহ ৬১৯ কোটি ৯ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত ১০টি থ্রাস্ট সেক্টরের মধ্যে ওষুধ শিল্প একটি। এর বিকাশ এবং সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ আমদানিকারী থেকে রপ্তানিকারীতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এ শিল্প জিডিপি বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
বর্তমানে অধিকাংশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। তবে বেশ কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কাঁচামাল উৎপাদন করছে। এ পর্যন্ত ৪১টির বেশি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের ওষুধশিল্প পার্ক চালু হলে কাঁচামাল উৎপাদন বাড়বে। এটি হলে আমদানি খরচ শতকরা ৭০ ভাগ কমে আসবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।