কাঁকড়ায় স্বাবলম্বী জেলেরা

ভোলার সাগরমোহনার দ্বীপ কুকরি-মুকরিতে শুধু পর্যটনের জন্যই নয়, বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অল্প সময়ে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় বাড়ছে খামার ও কাঁকড়া শিকারির সংখ্যা। ইলিশ-চিংড়ির পর এবার কাঁকড়া এখন এ অঞ্চলের জেলেদের কাছে মূল্যবান সম্পদ। এরই মধ্যে কাঁকড়া চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই। তবে পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা পেলে কাঁকড়া রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব বলে মনে করছেন এখানকার মানুষ। দেশে-বিদেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভোলার চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরিতে খামারে কাঁকড়া চাষ শুরু হয়েছে। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভজনক হওয়ায় উপকূলীয় এ অঞ্চলে কাঁকড়ার চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কয়েক বছর আগে কুকরি-মুকরির কাঁকড়া চাষি খলিলুর রহমান অনাবাদি ১৫ একর জমিতে ঘের তৈরি করে শুরু করেন কাঁকড়া চাষ। নদী থেকে জেলেদের ধরে আনা কাঁকড়ার বাচ্চা ওই খামারে ছাড়েন। এরপর জেলেদের ফেলে দেয়া কুচিলা, পচা চিংড়ি এবং সুঁটকি মাছ কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। মাত্র ৩ মাস পরই তা ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনে পরিণত হয়। এরপর বিক্রির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় এসব কাঁকড়া। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে দেশের বাইরে রফতানি করা হয়। খলিলুর রহমান জানান, কাঁকড়া চাষ করে বছরে কয়েক লাখ টাকার মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে বলে কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার বহু মানুষ। স্থানীয়দের হিসাব অনুযায়ী ভোলা থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭০০ কেজি কাঁকড়া ঢাকায় যায় এবং এর বেশিরভাগই বিদেশে রফতানি করা হয়।

এদিকে শীত মৌসুমে ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কাঁকড়া শিকার বেছে নিয়েছেন জেলেরা। খাল-বিলের পানি কমে যাওয়ায় জানুয়ারি মাস থেকে চরকুকরি-মুকরিসহ সাগরমোহনার ডুবোচর ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন শত শত জেলে কাঁকড়া শিকার করেন। আর এসব কাঁকড়া ধরে চাষির খামারে সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এসব কাঁকড়ার আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করেন তারা। কাঁকড়া শিকারি আর ছোট-বড় এসব খামারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আরও ১ হাজারেরও বেশি মানুষের। তারাও এখন সংসারে অভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। কাঁকড়া খামারে কর্মরত শ্রমিক লাভজনক ও সম্ভাবনাময় হওয়ায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কাঁকড়া চাষে এগিয়ে আসার দাবি কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের।
কাঁকড়া চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদফতর থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করা চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানালেন একজন মৎস্য কর্মকর্তা। সম্ভাবনাময় এ কাঁকড়া চাষের ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা পেলে একদিকে যেমন বেকারদের কর্মসংস্থান হবে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।