জেলায় কচুয়া উপজেলার সাচার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ১০২ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। বিদ্যালয়টি শিক্ষা ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন সহ-পাঠক্রমিক ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে। বিদ্যালয়টি তত্কালীন সাচার এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী জমিদার শ্রেণির লোকজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে। স্কুলের জন্য প্রথম সম্পত্তিদাতা হচ্ছেন সাচারের পার্শ্ববর্তী বায়েকের জমিদার মাইচ রায়। তার দান করা সম্পত্তির পরিমাণ ৬৮ শতক। বিদ্যালয়ের বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ দুই একর ৫২ শতক। ১৯১৬ সালে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বীকৃতি লাভ করে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া না গেলেও উল্লেখযোগ্য প্রধান শিক্ষকরা হলেন: প্রফুল্ল মুখার্জি, ছিদ্দিকুর রহমান, আলী আহমেদ ও বটুকৃষ্ণ বসু। এর মধ্যে আলী আহমেদ একটানা ৩৫ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ৯০ বছর বয়সী আলী আহমেদ বলেন, এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে অনেক ছাত্র রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হওয়াসহ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা (আলোকিত ব্যক্তি হিসেবে) লাভ করেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুইটি দ্বিতল ভবন ও চারটি টিনশেড ঘরে ১৯টি শ্রেণিকক্ষে ১৯জন এমপিওভুক্ত ও আটজন নন-এমপিওভুক্ত অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্কুলে ভোকেশনাল শাখার ১৭০ জনসহ মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ৪২৩ জন। বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার দিক থেকে এটি একটি সক্রিয় বিদ্যালয় (এক্টিভ স্কুল) হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সাচারের জমিদার বংশের উত্তরসূরী সাবেক কচুয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরন্নাহার ভূঁইয়া প্রায় ১০ বছর ধরে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে সুষ্ঠুভাবে ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বিদ্যালয়টি জেএসসি ও এসএসসিতে প্রতিবছর সন্তোষজনক ফলাফলের পাশাপাশি ২০১০ সালে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ১৯তম মেধা তালিকায় স্থান লাভের গৌরব অর্জন করে। প্রতিবছর জেএসসিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ লাভ করা ছাড়াও ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ১৬৬ জন বৃত্তি লাভ করে। অপরদিকে ২০১৫ সাল ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে উপজেলায় শীর্ষস্থান লাভ করে আসে।
সিসি ক্যামেরার আওতাধীন জ্ঞানের বাতিঘর এ বিদ্যালয়টির কিছু বিশেষ দিক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে— শেখ রাসেল ডিজিট্যাল ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং নিয়মিত প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডিজিটাল পাঠদান পদ্ধতি প্রয়োগ। এছাড়াও রয়েছে বিজ্ঞানাগার, সমৃদ্ধ পাঠাগার এবং উপজেলার অন্যতম বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ। জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের গৌরব অর্জনকারী বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক বটুকৃষ্ণ বসু বলেন, বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষের সংকট প্রকট। টিনশেড ঘরগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। উত্তর পাশে (চারতলা ফাউন্ডেশনের) সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর একাডেমিক ভবনটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ একান্ত প্রয়োজন। তিনি জানান, ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে বিদ্যালয়টি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে চলছে। বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণের জন্য শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।