শিক্ষার আলোয় বদলে যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবন

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। একটি শিক্ষা সহায়ক প্রতিষ্ঠান। এটি অবস্থিত মিরপুর-পল্লবী আবাসিক এলাকায় ১৩ নম্বর সড়কে। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয় একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের উদ্যোগে। মূল উদ্যোক্তা পেরু প্রবাসী কিশোর কুমার দাস। তিনি নিজে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একজন হয়ে বেড়ে উঠেছেন এদেশে। তাই প্রতিজ্ঞা ছিল, কখনো স্বচ্ছল অবস্থানে যেতে পারলে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্যে কিছু করবেন। তারই অনুপ্রেরণায় দেশের ৭ জেলায় ‘এক টাকায় আহার’ কার্যক্রম চালু হয় এবং ৮টি শাখায় চলছে সুবিধা বঞ্চিতদের ‘শিক্ষা সহায়ক পাঠদান কর্মসূচি’, পাশাপাশি একটি অনাথালয় ও একটি বৃদ্ধাশ্রম কার্যক্রম। এসব কার্যক্রম চলছে— ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রামু, রাজবাড়ি, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ। এরমধ্যে রাজবাড়ি ও রামুতে আছে দুটি অনাথালায়। রাজবাড়িতে ‘দিব্যাশ্রয়’ কার্যক্রম চলছে। বিদ্যানন্দের এই ৮টি শাখায় ২৫ জন বেতনভুক্ত কর্মকর্তা রয়েছে এবং ৩৫০ জন আছেন স্বেচ্ছাসেবক। যারা শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, তারা তাদের অবসর সময় দেন এই বিদ্যানন্দে। শিক্ষা কার্যক্রমে আছে ১২৫০ শিক্ষার্থী। যারা সবাই সমাজের সুবিধা বঞ্চিত। বিদ্যানন্দে যারা ক্লাস নেন, তারা সেই বিষয়ে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থী। স্কুলের পাশাপাশি তাদের ভালো রেজাল্টের সুযোগ করে দিতে সকাল বিকাল বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে ক্লাস হয়। সেখানে গরিব শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের ফাঁকে সুবিধামতো ক্লাস করতে আসে।

সায়মা আক্তার সুবর্ণা দোয়ারি পাড়া থেকে আসে বিদ্যানন্দে ক্লাস করতে আসে। সায়মার বাবা গ্যারেজে কাজ করে আর মা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। সায়মা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ‘স্বপ্নের ধারা’ স্কুলে। বিদ্যানন্দ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় লেখাপড়া করে অংক ও ইংরেজিতে এখন ভালো ফলাফল করতে পারে বলে জানায় সে। সায়মার মতো আরো আছে সীমা, সাব্বিরসহ অনেক শিশু। আরো আছে, বিদ্যানন্দের ক্লাসের কারণে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, তাসফিয়া লতিফ, মোহাম্মদ ইস্রাফিল, তাহসিনা আক্তার, উম্মে হাবিবাসহ আরো অনেকে। বিদ্যানন্দ কাউকে অর্থ সহায়তা দিয়ে, কাউকে গণিত, ইংরেজি পড়িয়ে সহায়তা দিচ্ছে। এভাবেই সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের স্বপ্নগুলোও পাখা মেলতে শুরু করেছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় শিক্ষা নিয়ে। ২২ জন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার শাব্দিক গ্রামে। সেখানে শিশুদের পড়ার সুযোগ করে দিলেও দেখা গেল, শিশুরা ঠিকমত পড়তে আসে না। তখন জানা গেলো ‘দারিদ্র্য’ তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ক্ষুধার কারণে ঠিকমত পড়তে আসে না শিশুরা, আর আসলেও পড়ায় মন বসে না। তখন খাবার প্রজেক্ট শুরু হয়।

বিদ্যানন্দের কর্মকর্তা আবু হাসানাত দীপু বলেন, ঢাকা শহরের ৮টি স্থানে রুটিন করে এক টাকায় খাবার দেয়া হয়। এক টাকা নেয়ার কারণ হচ্ছে, ওরা আমাদের কাছে বিনা পয়সায় খাচ্ছে না বা ওরা কারো কাছে ভিক্ষা নিচ্ছে না। টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছে। সারাদিনে ১১শ’ জনের খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়া ১২৫০ জন বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী বিদ্যানন্দে নিয়মিত পড়ছে। ঢাকা শহরের ২ থেকে ৩টি স্থানে আমরা রুটিন করে প্রতিদিন খাবার দেই। সবগুলো জেলা মিলে আমরা প্রতিদিন সাড়ে ১১শ’ জনের খাবার বিতরণ করি।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস বলেন, এই সামান্য খাবার দিয়ে আসলে দেশে থেকে ক্ষুধা দূর করা সম্ভব নয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজে একটা ম্যাসেজ পৌঁছানো যে, আপনি চাইলে আপনার বাড়তি খাবার শেয়ার করতে পারেন। সবাই যেন এই উদ্যোগ দেখে এগিয়ে আসে। আমাদের দেখে এখন অনেকে এ ধরনের কাজ করছে বলে জানান। তিনি বলেন, এখানে মূলত মূল বিষয়গুলোতে জোর দেয়া হয়। যেমন, গণিত, ইংরেজি। আমাদের এখানে গণিত পড়াচ্ছেন যিনি তিনি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে অনার্স করছেন।