পটোলের ক্ষেতের মতো একপাশ থেকে অন্যপাশ পর্যন্ত সারি সারি মাচা। লম্বা মাচায় ঝুলছে হাজারো তরমুজ। নেটের ব্যাগের মধ্যে সেই তরমুজ ভরে মাচার সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন কৃষক। যশোর সদরের পাঁচবাড়িয়া, রাহেলাপুর, হাশিমপুর এলাকার মাঠে গেলে দেখা মিলবে অসময়ে এ তরমুজক্ষেতের দৃশ্য। এ এলাকার শিক্ষিত যুবকরা জেসমিন-২ জাতের তরমুজ চাষের বিপ্লব ঘটিয়ে সোনালি দিনের অপেক্ষা করছেন।
যশোর শহর থেকে উত্তরে ৫ কিলোমিটার গেলে সদরের পাঁচবাড়িয়া গ্রামের মাঠ। এখানে চাষ হয়েছে অসময়ের তরমুজ জেসমিন-২। এ গ্রামের হুমায়ুন কবীর, শামীম হোসেন, শহিদুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলামÑ এ পাঁচ যুবক তরমুজ চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্রতি বিঘা থেকে তারা কমপক্ষে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ হিসাবে ১ বিঘা জমিতে বছরে তিনবার তরমুজ চাষ করতে পারলে অন্তত ৫ লাখ টাকা উপার্জন হবে বলে তারা স্বপ্ন দেখছেন।
এ চাষের প্রধান উদ্যোক্তা হুমায়ুন কবীর জানান, চুয়াডাঙ্গায় একটি প্রকল্পে চাকরিরত তার ভাইয়ের ছেলে খায়রুল ইসলামের কাছ থেকে শিখে আসেন। এরপর তার কাছের ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন। একপর্যায়ে শামীম, শহিদুল, আমিনুর ও তৌহিদুল মিলে একটি প্রজেক্ট দাঁড় করিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আরও ২ বিঘা চাষ করতে জমি প্রস্তুত করছেন। তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার খরচ হচ্ছে। তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ টাকার।
চাষি শহিদুল ও শামীম জানান, জেসমিন-২ জাতের এ তরমুজের আয়ুষ্কাল ৭০ দিন। এ হিসাবে বছরে তারা অন্তত তিনবার চাষ করতে পারবেন। এতে করে বছরে তাদের অন্তত ৫ লাখ টাকা লাভ হবে। তারা বলেন, আমরা ১ এপ্রিল বীজ বপন করি। এরপর ৭ এপ্রিল চারা রোপণ করি। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির তরমুজ ঢাকার কারওয়ানবাজারে ট্রাকে করে নিয়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। জমিতে এখনও কিছু রয়েছে। সেগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্রি করা যাবে।
তারা জানান, এ তরমুজ চাষ কঠিন কিছু নয়। কম্পোস্ট, জিপসাম, টিএসপি, এমওপি সার দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হয়। পরে জমিতে মালচিং পেপার বসিয়ে দিয়ে দেড় হাত পর পর বীজ বপন করতে হয়। গাছ বড় হলে বাঁশের তৈরি মাচায় গাছ (পটোলের চারার মতো) তুলে দেয়া হয়। ফুল থেকে ফল ধরা শুরু হলে প্রতিটি তরমুজ নেটের ব্যাগের মধ্যে ভরে বেঁধে দিতে হয়।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, তরমুজ মৌসুমি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। এখন সারা বছর সুস্বাদু তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। যশোরে চাষ হচ্ছে জেসমিন-২ জাতের তরমুজ। শুধু শীতের মৌসুম ছাড়া একই জমিতে সারা বছর এ ফসল ফলানো যায়। আর ১ বিঘা জমিতেই ৫ লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব। তিনি আরও জানান, তাইওয়ানের হাইব্রিড জাতের এ তরমুজ সাধারণ তরমুজের তুলনায় মিষ্টি ও স্বাদ বেশি।