রাঙ্গামাটি লেকে সাজানো ফলের নৌকা, বাড়তি আকর্ষণ পর্যটকদের

আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ বেয়ে জনসমাগম লেকের ধারে। উৎসুক পর্যটকের ভিড়ের মাঝে রাঙ্গামাটি লেকে থাকা ঝুলন্ত সেতুর ওপর থেকেই দেখা যায় ফলের বিরাট নৌকা। বিশেষ করে সরকারী ছুটির দিনগুলোতে যখন পর্যটকের চাপ থাকে তখনই জমে ওঠে ভাসমান নৌকায় ফল ব্যবসা। রাঙ্গামাটি পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে তা দিনে দিনেই বিক্রি করা হয়। মধু মাসের এই ফল যেন আরও মধুময় হয়ে ওঠে শুধু তরতাজা থাকার কারণে।

এসব ফলমূলে নেই ফরমালিন, নেই কোন কৃত্রিমতা। প্রকৃতির আদরে বেড়ে ওঠা গাছ-গাছালি থেকেই এসব ফল সরাসরি চলে যায় পর্যটকবেশী ক্রেতাদের কাছে। রাঙ্গামাটি লেকে নৌকায় পাড়ি জমিয়ে পর্যটকরা লেকের দু’ধারে থাকা পাহাড়ের পাদদেশে ও বনাঞ্চলে এসব ফলের গাছ প্রত্যক্ষ করেন ঠিকই, কিন্তু হাতের নাগালে পান না ফল। পর্যটন মৌসুম শেষ পর্যায়ে হলেও পাহাড় আর লেক ঘিরে পর্যটকদের চাপ কমেনি কাপ্তাই ও রাঙ্গামাটি শহরে। মধু মাসের এই ক্ষণে চারদিকে এখন পাকা ফলের ম ম গন্ধ। তবে শহুরে থাকারা ফরমালিনের কারণে পাকা ফল খাওয়া থেকে অনেকেই বিরত থাকেন। কিন্তু এরপরও ফলের ব্যবসা যেমন বন্ধ নেই, ক্রেতারও অভাব নেই বাজারে। তবে তাজা ফলের অভাব রয়েছে সর্বত্র।

রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একধাপ এগিয়ে নিয়েছে সুদৃশ্য লেক। বিশালকায় প্রকৃতির সৃষ্টি এ লেক যেন রাঙ্গামাটির পর্যটন এলাকা শুরু করে লংগদু, মারিশ্যা, মাইনিসহ দূর-দূরান্তে চলে গেছে। যার শেষ খোদ লেকে বিরাজমান সাম্পানের মাঝিরাও জানেন না। লেকের শুরু আর শেষ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও পর্যটকদের কমতি নেই পার্বত্যাঞ্চল এ অঞ্চলকে ঘিরে। লেকের পাশেই পর্যটকদের অবস্থান নির্ভর করে ইঞ্জিন বোটে ফলবোঝাই করে নিয়ে আসেন বিক্রেতা-ব্যবসায়ী মাঈনুদ্দীন। মধু মাসের ফলের মধ্যে মাঈনুদ্দীন আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, পেঁপে ছাড়াও বিভিন্ন পাহাড়ী ফলও সংগ্রহে রাখেন তার নৌকায়। বিশেষ করে রাঙ্গামাটির আনারস, কলা আর কাঁঠাল শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারাদেশেই এর সুনাম রয়েছে।

এ অঞ্চল থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ফলের চালান গেলেও গাড়িতে বোঝাই থেকে শুরু করে নামানো পর্যন্ত ফলের যাচ্ছেতাই সংগ্রহ বা ব্যবসা চলে। কিন্তু সরাসরি ফল খাওয়ার যে আনন্দ ও স্বাদ মেটাতে হলে রাঙ্গামাটির লেকের ধারে থাকা এ নৌকাটির কথা সবাইকেই মনে রাখতে হবে। খুবই সস্তায় বাজারে যেখানে একটি আনারসের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা সেই আনারস মাঈনুদ্দীনের কাছে মাত্র ১০ টাকা। আধাপাকা কলা নয়, একেবারে হলুদ বাংলা আর চাপাকলা যেন রাঙ্গিয়ে ঝুলানো হয়েছে নৌকায়। ক্রেতারা যে যার ইচ্ছেমতো ফল কিনে নৌকার ধারেই সাবাড় করে দিচ্ছে। আনারসের খোসা ছাড়িয়ে মাঈনুদ্দীন ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে, এ যেন পরিবারের সদস্যদের মতো অন্য ধরনের আপ্যায়ন। ফলের দাম নিলেও ব্যবসায়ীর ভাল ব্যবহারে ক্রেতারা পঞ্চমুখ।

মাঈনুদ্দীনের বাড়ি রাঙ্গামাটির তবলছড়ি ইউনিয়নে। পারিবারিক অবস্থান জানতে চাওয়া হলে মাঈনুদ্দীন বলেন, এক লাখ টাকায় সীতাকু-ের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প থেকে এ নৌকাটি কিনেছেন। দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছরের ব্যবসা যেন চলে আসছে লেকে ভাসতে ভাসতে। মাঈনুদ্দীন তিন সন্তানের জনক। এর মধ্যে দু’জন যমজ। এরা বাবার সঙ্গে নৌকায় সময় কাটায়। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নয়, প্রত্যেক মৌসুমেই যখন যে ফলের কদর থাকে সেই ফলের ব্যবসা চলে মাঈনুদ্দীনের এই নৌকায়।