তিন আসরের অপেক্ষার পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে নামছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর মর্যাদার দিক থেকে দ্বিতীয় সেরা বিবেচিত হওয়া আইসিসির এই টুর্নামেন্টে এবার কেমন খেলবে বাংলাদেশ_ তা নিয়ে চলছে জল্পনা, কৌতূহল ও আলোচনা। মাশরাফিদের শক্তি-সামর্থ্যের কোন দিকটা ম্যাচের গতিপথে কেমন প্রভাব ফেলবে, তার এক টুকরো বিশ্লেষণ…
ঝড়ো সূচনা ভরসা প্রথম তিনজনে
ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল তো আছেনই, তার সঙ্গী কে? সৌম্য সরকারই হওয়ার কথা। তবে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করার সুবাদে ইমরুল কায়েসও থাকবেন বিবেচনায়। তামিম-সৌম্যর জুটির পর তিন নম্বরে খেলবেন সাবি্বর রহমান। এই তিনজনেরই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সামর্থ্য আছে। তিনজনের অন্তত একজনও যদি পঁচিশ ওভার পর্যন্ত টিকে যেতে পারেন, বাংলাদেশ তাহলে স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহই পাবে, কিংবা রান তাড়ার পথে ভালোই এগিয়ে যাবে। প্রস্তুতি ম্যাচের প্রসঙ্গ বাদ দিলে তিনজনই কিন্তু ফর্মের মধ্যে আছেন। আয়ারল্যান্ডে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে রান পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে আগেও রান করেছেন তামিম। সৌম্য বড় ইনিংস খেললে বাংলাদেশ জেতে, এমনটাও দেখা গেছে অতীতে। আর গতিময় বোলিং কিংবা প্রতিকূল কন্ডিশনে সাহস দেখিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিশেষ সামর্থ্য আছে সাবি্বরের। রান বাড়াতে বা রান তাড়া করতে এ তিনজনের জ্বলে ওঠা খুবই দরকারি।
মধ্য-গতি
তিন অভিজ্ঞে ভর
যে কোনো দলেরই মিডল অর্ডারের ব্যাটিং ধরন এক হলে চলে না। দল বিপর্যয়ে পড়লে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকতে হয়। আর টপ অর্ডার ভালো শুরু এনে দিলে তাল ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে এই দায়িত্বটা তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের_ মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ আর সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল যে মহাবিপর্যয়ে পড়েছিল, তার বড় কারণ এ তিনজনের ব্যর্থতা। আবার তাদেরই সাফল্যের কারণে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল আসরেও তাদের ওপরই দলের ব্যাটিং সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করছে।
দুশ্চিন্তার নাম ডেথ ওভার আর ফিল্ডিং
সাম্প্রতিক সময়ে স্লগ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং প্রস্তুতি ম্যাচ_ সবখানেই শেষের দিকে প্রচুর রান বেরিয়ে গেছে। দুটি প্রস্তুটির একটিতে শেষ ৭ ওভারে ৯২ রান খরচ করে ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে, অন্যটিতে শেষ দশ ওভারে উঠেছে ৯৭ রান। আর ম্যাচ লো-স্কোরিং হোক বা হাই স্কোরিং_ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে স্লগ ওভারের ভূমিকা সবসময়ই বিশাল। ম্যাচের আগে ৪০ ওভারের গতি এক ঝটকায় বদলে যেতে পারে শেষের ওভারগুলোতে। এই সময়ের জন্য বাংলাদেশের ভরসা কেবল মুস্তাফিজুর রহমান। অন্যদের মধ্যে হয়তো রুবেল হোসেন আর সাকিবকে ব্যবহার করা হতে পারে। ডেথ ওভারের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য ভালো-মন্দ নির্ভর করছে ফিল্ডিংয়েও। গত কয়েক ম্যাচের প্রতিটিতেই একাধিক ক্যাচ মিস হয়েছে। ডেথ ওভার আর ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দল নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে নিজেদের অনুকূলে ফল পাওয়া খুবই সম্ভব।
অলরাউন্ডার ফ্যাক্টর সাকিব আর মিরাজ
ইংল্যান্ডের মাটিতে বোলিংয়ের মূল ভরসা পেসাররা। বাংলাদেশও খেলবে মুস্তাফিজ, মাশরাফি, রুবেলদের নিয়ে। এমনকি চার পেসার নিয়ে নামলে শফিউল বা তাসকিনকেও দরকার হবে। কিন্তু কন্ডিশনের ভাবনায় পেসার বাড়াতে গেলে স্পিনার নেওয়ার জায়গা কই? এসব ক্ষেত্রেই অলরাউন্ডারের খুব দরকার হয়। একজন সাকিবকে সবসময়ই ব্যাটসম্যান এবং বোলার দুই ক্যাটাগরিতেই হিসাব করা যায়। ব্যাটিং গভীরতা আর স্পিনিং অপশনের ভাবনায় একাদশে ঢোকার যোগ্যতা আছে মেহেদী হাসান মিরাজেরও। এ দুই অলরাউন্ডার বাংলাদেশ দলের জন্য ভরসা হতে পারেন পুরো ম্যাচজুড়েই, এমনকি ফিল্ডিংয়েও। দলের সফলতার অনেকখানি তাই তাদের ওপরও নির্ভর করছে।