১১৪ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে রায়পুরা আরকেআরএম বিদ্যালয়

দীর্ঘ ১১৪ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রায়পুরা আরকেআরএম উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে কর্মরত ছিলেন এবং এখনো আছেন। ১৯০৩ সালে রায়পুরা থানার প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় রায়পুরা আর.কে.আর.এম উচ্চ বিদ্যালয়টি। তত্কালীন সময়ে এ এলাকার দুইজন জমিদার অর্থাত্ তাত্তাকান্দা নিবাসী রাজ কিশোর পাল চৌধুরী এবং হাসিমপুরের রাধা মোহন পাল চৌধুরীর অর্থায়ন এবং তাদের উইল করা জমির ওপর রায়পুরা কড়ের পাড়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দুইজন জমিদারের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। রাজ কিশোরের জ.ক এবং রাধা মোহনের জ.গ অর্থাত্ রাজ কিশোর রাধা মোহন (আর.কে.আর.এম) নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়।

বিদ্যালয়টি তখনকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ছিল। ১৯৬২ সালে বিদ্যালয়টি কড়ের পাড় থেকে তাত্তাকান্দা কাঁকন নদীর তীরে স্থানান্তর করা হয়। চর এলাকার শিক্ষার্থীদের নৌপথে যাতায়াতের সুবিধার্থে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন নলিনী ঘোষ। রায়পুরা থানায় তত্কালে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বর্তমান বিদ্যালয়ের স্থানে আবাসিক হল ছিল। দূর-দূরান্তের অনেক ছাত্র-ছাত্রী আবাসিক হলে থেকে লেখাপড়া করতো। বিদ্যালয়টি তার ঐতিহ্য ধরে রেখে বর্তমানের পর্যায়ে এসেছে। এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে কর্মরত ছিলেন এবং এখনো আছেন। তাদের মধ্যে স্থপতি শামীম সিকদার, সিলেট শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান (সাবেক) প্রফেসর ড. সফিউদ্দিন আহম্মদ, সাবেক আইজি প্রিজন ও স্বরাষ্ট্রসচিব প্রয়াত মাঈনউদ্দিন খোন্দকার, কৃষক সমিতির সাবেক সভাপতি বাম রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত ফজলুল হক খোন্দকার, রায়পুরা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রয়াত প্রিন্সিপাল আব্দুল হালিম, প্রফেসর মোসলেহউদ্দিন,আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শাহাবউদ্দিন আহম্মদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসাইন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুন অর রশিদ, রায়পুরা পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া, বর্তমান মেয়র মোঃ জামাল মোল্লা, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনূছ আলী ভূইয়া প্রমুখ।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১২৮৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদানে ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পাঁচজন কর্মচারী রয়েছে। এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার ও যন্ত্রপাতির সংকট। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, আর.কে.আর.এম একটি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছিলাম বলে আজ আমি গর্বিত। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটাকে তার ঐতিহ্য ধরে রাখার লক্ষ্যে যদি আমার কখনো কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তাহলে করবো এটা আমার প্রাণের ইচ্ছা।

বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ ফজলুল হক ফকির বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য পৃথক একটি লাইব্রেরি ও একটি কম্পিউটার ল্যাবের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বর্তমান ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থায় কম্পিউটার ল্যাব অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ পার্থ বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় আরো উত্সাহী করে তোলার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছি। সেই সঙ্গে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে আরেকটি ভবন নির্মাণ ও ডিজিটাল ল্যাব তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।