মুড়ি বিক্রি করে পাবনার পাঁচ গ্রামের নারী-পুরুষ স্বাবলম্বী হয়ে সুখের সংসারে বসবাস করছে। গ্রামগুলোতে পারিবারিক বিরোধ বা কোনো হানাহানি-বিবাদ নেই। সবাই কর্মব্যস্ত। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের এ ব্যস্ততা। তবে রমজান মাস এলেই ব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
শহর থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর, শ্যামপুর, বিলকোলা, গোপীনাথপুর, ভবানীপুর ও রাঘবপুর ‘মুড়ি গ্রাম’ নামে পরিচিত। কয়েক যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় এসব গ্রামের মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন মুড়ি তৈরি ও বিপণন। এ গ্রামের হাতে তৈরি কেমিক্যালমুক্ত মুড়ির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সারা বছর ধরে মুড়ি ভাজা হয় গ্রামগুলোতে। তবে রমজান মাস এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীর অন্যতম হচ্ছে মুড়ি। কেমিক্যালে প্রস্তুত মুড়ির ভিড়ে আসল মুড়ির স্বাদ পাওয়াই এখন কঠিন। সেখানে মুড়ির আসল স্বাদ পেতে পাবনার ‘মুড়ি গ্রাম’ এর হাতে ভাজা মুড়ি তুলনাহীন। হাতে তৈরি এ মুড়ি ভাজতে বর্তমানে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ি গ্রামের নারী-পুরুষ। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এ ব্যস্ততা। কয়েক পুরুষ ধরেই মুড়ি তৈরির কাজে নিয়োজিত এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। এতেই খুঁজে পায় জীবনের ছন্দ। সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামকে মানুষ চেনে মুড়ি গ্রাম হিসাবে। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ গ্রামে প্রথম মুড়ি তৈরি শুরু করেন গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী। এক পর্যায়ে মুড়ি তৈরির কাজ মাহমুদপুরের গ-ি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর, বিলকোলা, গোপীনাথপুর, ভবানীপুর, রাঘবপুরসহ আরও বেশ ক’টি গ্রামে। এখনও সবাই বাপ-দাদার পেশা হিসেবে মুড়ি উৎপাদনকে ধরে রেখেছেন। মাহমুদপুর ও শ্যামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে মুড়ি তৈরির কাজ। শ্যামপুর গ্রামের আলী হোসেন জানান, শৈশব থেকেই তিনি মুড়ি তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও জানান, গ্রামের পুরুষরা হাট থেকে ধান কেনা, ধান ভাঙ্গানো এবং উৎপাদিত মুড়ি বাজারে বিক্রি আর বাড়ির নারীরা ধান সেদ্ধ, শুকানো, মুড়ি তৈরিসহ নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন।
মাহমুদপুর গ্রামে মুড়ি তৈরি কাজে নিয়োজিত হাছিনা বেগম ও সুফিয়া খাতুন জানান, মূলত স্বর্ণা, বিআর ১১, বিআর ২৯ এবং আউশ ধান থেকে তারা মুড়ি তৈরি করেন। এর মধ্যে আউশ ধানের মুড়ির স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে তার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
মাহমুদপুর গ্রামের আহম্মদ আলী জানান, বাপ-দাদার পেশা হিসেবে মুড়ি উৎপাদনকে ধরে রেখেছি। লাভ তো হয়ই, সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের গ্রামগুলোতে কোনো বিবাদ নেই, আমাদের সময়ও নেই, আমরা সারা দিন ব্যস্ত থাকি। এক মণ ধান থেকে ২২ থেকে ২৪ কেজি মুড়ি তৈরি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে এক মণ ধানের মুড়ি বিক্রি করে হাতে লাভ থাকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ ব্যাপারে পাবনা বিসিকের শিল্পনগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জে এন পাল বলেন, মাহমুদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মুড়ি তৈরির বিষয়টি আমাদের জানা। তারা কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি তৈরি করেন।