হাওর অঞ্চলের আগাম বন্যার অভিজ্ঞতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ভাসমান বেডে চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারণের বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে সবজি ও মশলার চাষ সম্প্রসারণ ও গবেষণায় ১১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সবজি ও মশলার উৎপাদন এবং পুষ্টিগত অবস্থা শতকরা ১০ ভাগ বৃদ্ধি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রকল্প এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভাসমান এ প্রযুক্তির বিস্তার ঘটবে। জলমগ্ন অবস্থায় ফসল উৎপাদনের নির্ভরতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ এবং ভাসমান পদ্ধতিতে শাকসবজি ও মশলা চাষে ক্ষুদ্র কৃষককে উৎসাহীত করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মশলার চাষ গবেষণা ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সম্প্রতি প্রকল্পটির ওপর বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ড. শামসুর আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, সরকারি প্রচেষ্টায় এটি করা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি কৃষকের মাঝেই ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে হবে। গবেষণার সময় কৃষককে সম্পৃক্ত করতে হবে। এক থেকে তিনবার ফসল উৎপাদনে সফলতা আসছে কৃষকের মাঝে, তা ছড়িয়ে দিতে হবে। উদ্যোগটি সরকারের হলেও বাস্তবায়ন করবেন কৃষক। সুতরাং সব ক্ষেত্রেই তাদের যুক্ত করতে হবে। তাহলেই প্রকল্পের সফলতা আসবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি আবার কৃষি খাতে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবগুলো হচ্ছে মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, জলমগ্নতা, উপকূলীয় বন্যা, প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ এবং উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস। যুক্তরাষ্ট্রের নাসার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী আগামী ১০০-২০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বা তার বেশি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের প্রায় ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত এলাকা প্লাবিত করতে পারে। অন্যদিকে আইপিসিসির ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বা তার বেশি হলে দেশের প্রায় ১৭ শতাংশ নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরও অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো উপকূলীয় বন্যা ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘ সময়ের জন্য সাধারণত জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যস্ত নিমজ্জিত থাকে। অন্যদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যার কারণে প্রচুর ফসল হানি ঘটে। উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৭ শতাংশ এলাকা লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ করেছে, যা ফসলের মারাত্মক ক্ষতি বা সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট করছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও হাওর এলাকায় সমস্যাকবলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নতির লক্ষ্যে স্থায়ী কৃষি উৎপাদনের জন্য ক্লাইমেট স্মার্ট ও স্থানভিত্তিক সৃজনশীল কৃষি প্রযুক্তির উদ্বাবন ও সম্প্রসারণ অপরিহার্য হওয়ায় এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেমন- মায়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডস, পেরু এবং মেক্সিকোতে ভাসমান পদ্ধতির প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ্ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে বারি অংশের কার্যক্রম হচ্ছে- ভাসমান কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ২৫টি উপজেলায় গবেষণা পরিচালনা, ভাসমান কৃষি বিষয়ে সুবিধাভোগীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, চার হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ২ হাজার
বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে। ডিএই অংশে কৃষক প্রশিক্ষণ, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, মাঠ
দিবস, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, মশলা ও সবজি ফসলের প্রদর্শন করা হবে।