খাঁচায় দেশি কৈ চাষে বাকৃবি গবেষকের সাফল্য

আবহমানকাল থেকে আমাদের দেশে কৈ অত্যন্ত অভিজাত ও জনপ্রিয় মাছ হিসেবে পরিচিত। অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় মাছটির বাজার দরও বেশ চড়া। বর্তমানে উন্নত মা মাছের অপ্রতুলতা, পুকুরে চাষ ও পোনা উৎপাদন কৌশল জানা না থাকায় মাছটি প্রাকৃতিক পরিবেশে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। একারণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ কৌশল ও দ্রুত বর্ধনশীলতার জন্য থাই ও ভিয়েতনাম কৈ দখল করে নিয়েছে দেশি কৈ এর বাজার। তবে সম্প্রতি পুকুরে খাঁচায় মা মাছ উৎপাদন ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে শাকুর আহম্মদ। বাকৃবি রিসার্স সিস্টেমের অর্থায়নে এক বছর গবেষণা করে তিনি ওই সাফল্য পান। মাছটি সম্পর্কে ড. শাকুর আহম্মদ বলেন, নদীর নাব্য সংকট, পানি দূষণ, বাঁধ নির্মাণ, শিল্প কারখানায় বর্জ্য, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছটি প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি জলাশয়ে প্রাকৃতিক বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় ইতিমধ্যে দেশি কৈ (অহধনধং ঃবংঃঁফরহবঁং) বিপন্নপ্রায় প্রজাতির মাছ বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাছাড়া পুকুরে মাছটির চাষ প্রযুক্তি ও উন্নত মা মাছের প্রাপ্যতা না থাকায় অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে মাছটি। আমাদের দেশের হাওর-বিলে মাছটি পাওয়া গেলেও সম্প্রতি হাওর বিপর্যয়ের ফলে ভাল জাতের মা মাছ পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠতে পারে। পুকুরে মাছটির চাষ প্রযুক্তির বিষয়ে ড. আহম্মদ বলেন, কৈ মাছ প্রজনন মৌসুমে এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টির সময় পুকুর থেকে কানকোর সাহায্যে হামাগুড়ি দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। এমনকি পুকুরে চারদিকে জাল দিয়ে বেড়া দিলেও সেখান থেকে চলে যায়। এ জন্য চাষিরা মাছটি পুকুরে চাষ করতে পারেন না। এই সমস্যা সমাধানে পুকুরে খাঁচায় পদ্ধতির মাধ্যমে চাষ করে গুণগত মা মাছ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, পরে সেখান থেকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির থার্মোস্ট্যাটের সাহায্যে ভ্রূণীয় অবস্থায় বিভিন্ন তাপমাত্রায় পোনা তৈরি করা হয়। সেখান থেকে অধিক ডিম ফোটার হারের উপর নির্ভর করে উন্নত ও গুণগতমানের পোনা বাছাই করে হাপায় ছাড়া হয়। এক্ষেত্রে পুকুরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এতে পোনার মৃত্যুর হার অনেক কম এবং বৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্য হারে দেখা গেছে। ড. শাকুর মাছটি সম্প্রসারণ সম্পর্কে বলেন, খাঁচায় দেশি মা কৈ মাছ উৎপাদন কৌশল দেশে এটিই প্রথম। মাছটির ভালো জাত প্রাপ্তির জন্য আমি জার্মপ্লাজমে সংরক্ষণ করব। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দেশি কৈ মাছের সহজে পোনা প্রাপ্তি যেমন সুগম হবে তেমনি বিপণনের মাধ্যমে এই মাছের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে। তবে মাছটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বাজারে প্রাপ্ততা নিশ্চিত করে আমিষের চাহিদা পূরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশি কৈ মাছটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।