রমজানে রাজধানীতে সর্বক্ষণিক পানি উৎপাদনের ব্যবস্থা

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা ওয়াসা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে। নগরীর ৭৮১ পানির পাম্পে সার্বক্ষণিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রতিটি পাম্পে অপারেটরদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে অর্ধেকেরও বেশি পাম্পে জেনারেটর স্থাপন কানেকশন রয়েছে। ৩শ’ পাম্পে বিদ্যুতের ‘ডুয়েল কানেকশন’ দেয়া হয়েছে। অল্প কিছু পাম্পে জেনারেটর ও বিদ্যুতের ডুয়েল কানেকশন নেই। এসব পাম্প এলাকায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পানির গাড়ি ও ট্রলির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এমডি বলেন, নগরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ওয়াসা এখন বাড়তি ১৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। নগরবাসীর প্রতিদিন ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ওয়াসা ২৪২ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গত চার বছরে ঢাকা ওয়াসা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। তবে হ্যাঁ কয়েকটি এলাকায় ‘পকেট’ সমস্যা রয়েছে। এগুলো দূর করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বনশ্রী, মিরপুর, মগবাজার, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানির নতুন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আবার এখানে পুরনো পানির লাইন দিয়েও পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। এগুলো অল্প সময়ের মধ্যে দূর করা হবে। রমজান মাসের জন্য ঢাকা ওয়াসা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সবার জন্য একটি হট নম্বর ১৬১৬২ স্থাপন করা হয়েছে। পানির কোন সমস্যা হলে এই নম্বরে অভিযোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে উৎপাদিত মোট পানির ৮৭ শতাংশ আসত ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। এখন তা কমিয়ে ৭৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে চাহিদার ২২ শতাংশ পানির যোগান পাওয়া যাচ্ছে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ‘পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প’ এবং মেঘনা নদী থেকে পানি এনে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ‘গান্ধবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পের’ কাজ এগিয়ে চলেছে। ঢাকা ওয়াসার ইতিহাসে এই প্রথম মোট চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত পানি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। পানির দিক থেকে ঢাকা ওয়াসা মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ।

এছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প, ফেজ-৩ এর সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চালাচ্ছে ওয়াসা। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধন করে নগরীতে সরবরাহ কারা যাবে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধন হওয়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প, ফেজ-২ থেকে এখন দৈনিক ২২ দশমিক ৫ কোটি লিটার পানি ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহে যোগ হয়েছে বলেও জানান ওয়াসা এমডি। একইসঙ্গে ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ উৎসের দিকে অগ্রসর হলেও রাজধানীবাসীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ৩ জুন পর্যন্ত সর্বমোট ২১৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এরপরও রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষ এখনও সময়মতো পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাকসিম এ খান বলেন, রাজধানীর ৭৮১টি পানির পাম্পের মধ্যে প্রতিদিনই শতকরা এক শতাংশ পাম্প নষ্ট হওয়া কিংবা মেরামতের কাজ চালানোর জন্য বন্ধ রাখতে হয়। আর প্রতিটি পাম্পের আওতায় থাকে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এ হিসাবে এই সমস্যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঢাকার বস্তিগুলোতে বসবাসরত প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে বৈধ পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে।