শুটিংয়ে নতুন সূর্যোদয়

গেল মে মাসে আজারবাইজানের বাকুতে হয়ে গেল ইসলামি সলিডারিটি গেমসের চতুর্থ আসর। মুসলিম প্রধান ৫৭টি দেশ এখানে মোট ২১টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা করে। যেখানে বাংলাদেশ অংশ নেয় আটটি ইভেন্টে। ১১ দিনব্যাপী ক্রীড়াযজ্ঞে সেরাদের কাতারে বাংলাদেশের জায়গা হয়নি বটে, তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে শুটিংয়ে। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে মিশ্র দলগত ইভেন্টে দেশকে স্বর্ণ এনে দিয়েছেন দুই শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি ও সৈয়দা আতকিয়া হাসান দিশা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা শুটারদের কথা আসলে আসিফ হোসেন খানের নাম সবার আগে উচ্চারিত হয়। ২০০৪ সালে পুলিশের হাতে নৃশংস হামলার পর হারিয়েই গেছেন তিনি। অবশ্য ফেরার চেষ্টা ছিল, হয়ে ওঠেনি সেভাবে। কালের অতলে তিনি যখন তলিয়ে যাচ্ছেন, ততদিনে উত্থানের পথে বাকি। আসিফের সঙ্গে মিলেই দিল্লি কমনওয়েলথে জিতেছিলেন তাম্র পদক।

আসিফকে দেখেই শুটিংয়ে আসা বাকি নিজেকে প্রমাণ করতে সময় নেননি। নিজের পরিশ্রম, মেধা আর ধৈর্য দিয়ে আরও খানিকটা এগিয়ে নিয়েছেন দেশের শুটিংকে। তার হাত ধরেই ইসলামি সলিডারিটি গেমসের দ্বৈত ইভেন্টে প্রথম স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। সতীর্থ সৈয়দা আতকিয়া দিশাকে সঙ্গে নিয়ে ফাইনালে হারিয়ে দেন ইরানের খেদমতি-নুরুজিয়ান জুটিকে। দিল্লিতে শুটিং বিশ্বকাপে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছিল এই ইভেন্টটি। এবার সলিডারিটি গেমসে সেটাতেই বাজিমাত বাংলাদেশের। এদিন প্রথম তিন শটে বাংলাদেশের এই দুই শুটার যথাক্রমে ২০.৯, ২০.৩, ১৯.৭ পয়েন্ট স্কোর করে। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা খেদমতি-নুরুজিয়ান জুটি তুলে নেয় ২১ পয়েন্ট। এরপর আবারও টানা দুটি শটে ২০.৬ ও ২১.৫ পয়েন্ট পেয়ে স্বর্ণপদক নিজেদের করে নেয় বাকি-দিশা জুটি।

নারায়ণগঞ্জের মেয়ে দিশা ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের চেয়ে ৫০ মিটার থ্রি পজিশনেই বেশি সাফল্য পেয়েছেন। স্বর্ণও জিতেছেন এই ফরম্যাটে। কিন্তু বাকুতে খেলতে হয়েছে ১০ মিটারে। শুরু থেকেই নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন দিশা, সাফল্যটাও পেতে দেরি হয়নি তার। ১০ মিটারে এটা তার প্রথম স্বর্ণ জয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাকির অর্জন নেহাত কম নয়। তবে সর্বশেষ স্বর্ণ জিতেছিলেন ২০১০ সালে এসএ গেমসে, এই ১০ মিটার এয়ার রাইফেলেই। এরপর ২০১৪ সালের কমনওয়েলথ গেমসে কানের পাশ দিয়ে স্বর্ণপদক বের হয়ে যায়। ওই ইভেন্টের পর অবশ্য কম গঞ্জনা সহ্য করতে হয়নি তাকে। মাঝের দুই বছর কোন পদকই জোটেনি তার। জবাবটা দিলেন ইসলামি সলিডারিটি গেমসে। সেরা হয়ে আবারও বুঝিয়ে দিলেন, দেশের হয়ে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে তার।

সর্বশেষ রিও অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে শুটিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় শুটিংয়ে টানা ১০ বার ১০ মিটার রাইফেলে স্বর্ণজয়ী বাকি। নিজের পুরোনো রেকর্ডকেও ছুঁয়ে দিতে পারেননি সেবার।

ইসলামি সলিডারিটি গেমসে বাক-দিশার সাফল্যই শেষ নয়! ছেলেদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ২৪৫.৫ পয়েন্ট স্কোর করে রৌপ্য পদক জিতে নেন রাব্বি। একই ইভেন্টে বাকি পঞ্চম স্থান অধিকার করে হতাশ করেছিলেন সবাইকে।