সারাবছর কর্মমুখর ইটনার ‘চাঁইগ্রাম’

ইটনা উপজেলা সদরের একটি গ্রামের নাম পশ্চিমগ্রাম-দাসপাড়া। লোকে এখন এই গ্রামটিকে ‘চাঁইগ্রাম’ হিসেবেই চেনেন। চিংড়ি মাছ ধরার কাজে ব্যবহূত চাঁই তৈরি করে এই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। প্রায় সারাবছরই প্রতিটি পরিবারের সদস্য চাঁই তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন।

ওই গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার ফাঁকে অভিভাবকদের সহযোগিতা করে। নারীরাও সংসারের কাজ সেরে বাঁশ-বেতের কাজে হাত লাগান। এই গ্রামের কারিগরদের তৈরি চাঁই এর সুনাম পুরো হাওর এলাকায় ছড়িয়ে আছে। সারাবছরই এর চাহিদা থাকে। তবে বর্ষাকালে চাঁই এর চাহিদা বেড়ে যায়। তখন কারিগররা যেন দম ফেলার ফুরসত পান না। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা প্রভৃতি জেলা থেকেও পাইকারদের অসংখ্য নৌকা এই গ্রামের ঘাটে এসে ভিড়ে। পরে নৌকা বোঝাই করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। বংশ পরম্পরায় এই গ্রামের বাসিন্দারা শুধু এই পেশার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছেন।

কারিগররা জানান, একমাত্র চাঁই দিয়েই হাওরের চিংড়ি ধরা হয়। চাঁই তৈরিতে প্রয়োজন হয় বাঁশ, কয়েস বেত, সিটি সূতা, তার, সিনথেটিকের তৈরি ছালা প্রভৃতি। গ্রামের পরেশ দাস জানান, বর্তমানে এসব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন লাভের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। প্রতি শ’ চাঁই এ বছর ১০/১১ হাজার টাকায় পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। এ বছর অকাল বন্যায় হাওরে চিংড়িসহ সব ধরনের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চাঁই এর চাহিদা এ বছর কিছুটা কম।

গ্রামের প্রবীণ কারিগর জগদীশ দাস জানান, এই গ্রামে বছরে কয়েক লাখ চাঁই তৈরি হয়। এর প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিল্পের কারিগররা কষ্টে দিন কাটায়। তিনি হাওরে চিংড়ি চাষের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং সরকারিভাবে ঋণ দিয়ে এই কুটির শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।