সময় এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর

‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। ’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই স্লোগানটি আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একেবারেই যথার্থ। সত্যিই বাংলাদেশের এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোরই সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি এখন আরো সামনের দিকে প্রসারিত। জাতির পিতার সোনার বাংলা আর বেশি দিন স্বপ্ন হয়ে থাকবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক নতুন আলোকোজ্জ্বল স্তরে উন্নীত হবে। মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের স্তরে বাংলাদেশের অভিযাত্রায় তাঁর অনুপ্রেরণা, প্রজ্ঞা ও সাহস বাঙালি জাতিকে নবতর চেতনায়, স্বপ্নে ও কর্ম-সাধনায় উজ্জীবিত করছে।

মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজির বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য জাতিসংঘ তথা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। দারিদ্র্য বিমোচন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মায়ের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এরই মধ্যে জাতিসংঘের রোল মডেল। এমডিজির সাফল্যের পর জাতিসংঘ এখন প্রণয়ন করছে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের কাজ চলছে দ্রুততম গতিতে। এসডিজি বাস্তবায়নকে দ্রুততর করার জন্য সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবার দক্ষতা ও সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এটিই এ যাবৎকালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে এটি একটি ধারাবাহিক কর্মসূচি। এর আগে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে আগামী ২০২২ সালের জুনে এ কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হবে। আর জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩০ সালে। অর্থাৎ এসডিজি বাস্তবায়নের অনেক আগেই বাংলাদেশ এসডিজির স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়গুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।

এসডিজির স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনও নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে চলেছেন।

অল্প কিছুদিন আগে স্বল্পোন্নত দেশের আয়সীমা অতিক্রম করে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির লক্ষ্য, ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করা। অত্যন্ত জনবহুল ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় আক্রান্ত একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের চমক দেখিয়েছে। দেশটির দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতাকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অতিক্রম করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি আজ একটি জাতির নেতা থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্বনেতার মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। এ জন্য তিনি সর্বাবস্থায় জাতির পিতার আদর্শ ও কর্মপরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সফল নেত্বত্বের যে পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে চলছেন, সেখানে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও প্রগতি অনিবার্য। বাংলাদেশ সে পথের দিকেই দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সব শক্তি, মেধা ও প্রজ্ঞাকে সম্মিলিতভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যেভাবে নিয়োগ করেছেন, তাতে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিস্ময়করভাবে এগিয়ে চলছে। জাতিসংঘ এসডিজি বাস্তবায়নকারী দেশগুলোকে বলেছে, ভবিষ্যতে কিভাবে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা যায়, সেসব সূচক অর্জনে তারা যেন বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশই দেখিয়েছে কিভাবে চরম দারিদ্র্যকে দূর করতে হয়, কিভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে সব শিশুর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমানো যায় এবং শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন থেকে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই সমগ্র পৃথিবীতেই কিভাবে আইকনে পরিণত হওয়া যায়।

বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন কানেক্টিভিটির দিকে। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছেন দ্রুততার সঙ্গে; পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাজির করছেন। ভুটান সফরে গিয়ে বিবিআইএন বাস্তবায়নে ভুটানকে জোর তাগিদ দিয়েছেন। বাংলাদেশের ১২ কোটি মানুষ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় নিয়মিত বিচরণ করে প্রায় সাত কোটি মানুষ। ইন্টারনেট দুনিয়ায় পা রাখা মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এ জন্য কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র তথা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তাঁর তত্ত্বাবধানে আইসিটি সেক্টরে দৃশ্যমান সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশজুড়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি অফিসে কানেক্টিভিটি স্থাপন করা হয়েছে। একেবারে তৃণমূলের মানুষও এ কানেক্টিভিটির সুফল পাচ্ছে। মানুষকে এই প্রযুক্তিগত কানেক্টিভিটির দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি। তাঁর কর্মতত্পরতায় রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনপদের জনগণ আইসিটি সেবার আওতায় এসেছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এবং গতিশীলতা আনতে কানেক্টিভিটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের দারুণ সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশে বৈধপথে স্বল্প খরচে দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তি পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। চলতি বছর ১০ লাখ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

সব মিলে উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছন ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। যিনি দেশের জন্য যেটুকু করেন, দেশই সে কথা জানিয়ে যাবে যথাসময়ে। আসলে জনগণ তাঁকেই পছন্দ করেন যিনি মন-প্রাণ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের এগিয়ে চলা শুধুই সাফল্যের। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।