ডাল তেল ও মশলার বীজ উৎপাদনে প্রকল্প

ডাল, তেল ও মশলার বীজে বিদেশি নির্ভরতা কামানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এই তিন ফসলের বীজের উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির প্রস্তাবনা এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কশিন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, একনেকের অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু করে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলার সব উপজেলায় প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় ১৭ শতাংশ। প্রতি বছর প্রায় ১ শতাংশ কৃষি জমি কমছে, যা দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ কারণে কম জমিতে অধিক ফসল ফলাতে খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের বিকল্প নেই। অন্যদিকে ফসল উৎপাদনে সম্পৃক্ত কৃষক মানসম্মত বীজের অভাব, ফসলের কম উৎপাদনশীলতা, প্রযুক্তির অভাব ও মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় পড়েন। ভালো বীজ ব্যবহার করলে একই জমিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি উৎপাদন সম্ভব। আর বাড়তি এ উৎপাদন অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আমদানি হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এজন্য প্রয়োজন উন্নত বীজ ব্যবস্থাপনা।
এতে আরও বলা হয়, দানাজাতীয় শস্য উৎপাদনই নয়, পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ডাল, তেল, মশলা ও ফলের উন্নতমানের বীজ উৎপাদনেরও বেশ বড় বাজার রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষক, উৎপাদনকারী, সরকারি এজেন্সি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অন্য স্টেকহোল্ডাররা জড়িত। সরকারি প্রতিষ্ঠান কম মূল্যে কৃষক পর্যায়ে ডাল, তেল ও মশলার মানসম্মত বীজ উৎপাদন, বিতরণ ও সংরক্ষণ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ফসলের মানসম্মত বীজ সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি, উন্নত বীজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, অধিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরণ ও আমদানি কমিয়ে আনা যাবে।
একইসঙ্গে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সাথী ফসল হিসেবে মৌচাষের মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় ৩৬ হাজার ৩৫৬টি বীজ উৎপাদনবিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। মাঠ দিবসের আয়োজন করা হবে ১৮ হাজারটি। বীজ প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণে ১ হাজার ৪৭৩টি ময়েশ্চার মিটার, ১৮ হাজার বীজ সংরক্ষণ পাত্র, ১৩ হাজার ৫০০ চালুনি, সাড়ে ৪ হাজার ওজন মেশিন ও সাড়ে ৪ হাজার সেলাই মেশিন কেনা হবে। এর বাইরে ১৮ হাজার কৃষক ও ২৮২ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি কৃষক পর্যায়ে ডাল, তেল ও মশলা জাতীয় ফসলের উন্নতমানের বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য বলে তিনি মনে করেন।