২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সকল শিশুর জন্য দুপুরের খাবার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যালয়ে ভর্তি শতভাগে উন্নীত করা, ঝরেপড়া বন্ধ, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি ও পাঠে মনোনিবেশে খাবার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘জাতীয় স্কুল ফিডিং নীতিমালা-২০১৭’ এর খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এ নীতিমালা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) রবিউল ইসলাম।
শিশু শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবারের জন্য পাঁচ ধরনের খাবারের বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তালিকায় রয়েছে রান্না করা খাবার- ভাত, খিচুড়ি, ডিম, ডাল, সবজি ইত্যাদি। এই খাবার গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় কমিউনিটি এবং শহর এলাকায় উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে। স্কুল চলাকালে সব শিক্ষার্থীকে পুষ্টিকর বিস্কুটও সরবরাহ করা হবে। কখনও কখনও শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে প্রক্রিয়াজাত খাবার। যেমন- পাউরুটি, শুকনো ফল, দুধ ইত্যাদি। খাবারগুলো স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে। মৌসুমি ফল, বিশেষ করে কলা, পেয়ারা, আম, আমড়া স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ও পাহাড়ি এলাকায় দুপুরের খাবারের বিষয়টিও অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে অর্থের উত্স হিসেবে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিসেবার সারচার্জ, দাতা সংস্থা থেকে পাওয়া অর্থে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার তহবিল, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
সকল স্কুলে রান্না না করে একটি ক্লাস্টারে রান্না করে বিতরণের জন্য এনজিওদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে একটি সেল গঠন করা হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণে থাকবে একটি উপদেষ্টা কমিটি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট মেয়াদে উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি নিয়োগ দেবে। এ কমিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের পরামর্শ দেবে।
উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের কর্মকর্তারা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত থাকবেন। উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, পেশাজীবী সংগঠনসহ অন্যান্য অংশীজন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত হতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিউনিটির অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ভিত্তিক খাদ্য কর্মসূচিতে উপযোগিতা ও কার্যকারিতা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী শিশুদের মায়েদেরকে সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। তাদের দ্বারা শাক-সবজি, ডিম, দুধ, কলা, ফল-ফলাদি ইত্যাদি উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে বিদ্যালয়ে সরবরাহকরণে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দরিদ্র শিশুদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে ২০১১ সাল থেকে সরকার ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি চালু করে। কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে দেশের ৯৩টি উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ লাখ শিশুর মাঝে বিশেষভাবে তৈরি করা পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহ করা হচ্ছে। সময়ে সময়ে বিস্কুটের স্বাদ পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে প্রকল্পের আওতায় দেশের কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিস্কুটের পরিবর্তে পরীক্ষামূলকভাবে রান্না করা খাবার (মিড ডে মিল) পরিবেশন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৬৩ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে ২ কোটি শিশু।