এসএসসি পাস করে তাক লাগিয়েছে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আয়শা

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও এবছর স্বাভাবিক নিয়মে এসএসসি পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আয়শা আক্তার (১৫)। ৩.৮২ গ্রেড পেয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে সে এ সাফল্য অর্জন করে। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধিতা। বিশেষ কোনো পদ্ধতিতে নয়, আর দশজন শিক্ষার্থীর মতো সে নিয়মিত স্কুলে যেতো। ক্লাসে শিক্ষকরা যা পড়াতেন আয়শা তা শুধু তাকিয়ে দেখতো। আর বাড়িতে এসে বই মেলে গুন গুন করতো। এভাবেই সে রপ্ত করে সবকিছু। একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সাধারণ স্কুল থেকে স্বাভাবিকভাবে পাস করায় শিক্ষক, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ হতবাক হয়েছেন।

উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের কৃষক শামছুল হক হাওলাদার ও মাসুরা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট আয়শা এবং তাদের একমাত্র কন্যা। ছোটবেলা থেকেই তার লেখাপড়ার প্রতি অত্যন্ত ঝোঁক ছিল। তার আগ্রহ দেখে মা-বাবাও তাকে লেখাপড়া করাতে উত্সাহিত হন।

আয়শার মা মাসুরা বেগম বলেন, জন্মের এক-দেড় বছর পরই বুঝতে পারি আয়শা প্রতিবন্ধী। একমাত্র মেয়ে তাও আবার প্রতিবন্ধী এই ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। মেয়েটা কথা বলতে পারে না এবং কানেও শোনে না। অথচ তিন-চার বছর বয়স থেকেই সে বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতে শুরু করে। ইশারা-ইঙ্গিতে বই, খাতা-কলম এনে দিতে বলত। প্রথমে সে একা একাই শতকিয়া লিখতে শুরু করে। তার এমন আগ্রহ দেখে বাড়ির পাশের রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সতীন্দ্র নাথ মণ্ডল স্যার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করান। ওই স্যারের প্রচেষ্টায় আয়শা ধীরে ধীরে লেখাপড়া রপ্ত করে। পিএসসি পরীক্ষায় পাস করার পরে আয়শাকে রাজাপুর বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই।

মাসুরা বেগম আরো বলেন, স্কুলের সহপাঠীরা প্রতিবন্ধী বলে আয়শাকে খেপাতো। তাতে সে মাঝে মধ্যে রাগ হয়ে স্কুলে যেতে চাইতো না। এসএসসি পাস করায় এখন আমরা চিন্তামুক্ত। যতো কষ্টই হোক মেয়েকে লেখাপড়া করাবো। রাজাপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমাদুল হক হাওলাদার বলেন, মেয়েটি কথা বলাতো দূরের কথা কানেও শুনতে পায় না। প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার পদ্ধতি আলাদা। এমনকি তাদের জন্য আলাদা স্কুলও রয়েছে; কিন্তু আয়শা তাদের থেকে ব্যতিক্রম। প্রতিবন্ধী হয়েও সে স্বাভাবিক নিয়মে এসএসসি পাস করে আমাদের আশান্বিত করেছে।