একটি মাত্র গো-খামার থেকে তিন ধরনের আয় করছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়নের সৈয়দ আহমদ। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল ভিন্ন কিছু করার। আর বর্তমানে এ স্বপ্নেরই বাস্তবরূপ তার গো-খামার। এখান থেকে দুধ, জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করে তিনি তিন ধরনের আয় করছেন।
সৈয়দ আহমদ বলেন, নিজের জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২২টি অস্ট্রেলিয়ান গাভি দিয়ে দুধের খামার শুরু করেছিলেন তিনি। সেই খামার ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। গাভি বেড়েছে, বেড়েছে দুধের উৎপাদনও। তা দেখে আশপাশের অনেকেই দুধের খামার শুরু করলেন। এখন খামার থেকে দুধ পাওয়ার পাশাপাশি বায়োগ্যাস প্রকল্প করে গ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটি খামার মানে একের ভেতরে তিন, এক খামার থেকেই তিন ধরনের আয়।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় এখন তিন শতাধিক গরুর খামারের মধ্যে অন্তত প্রায় ১০০ খামারে বায়োগ্যাস প্রকল্প আছে। এসব খামার অনেক গ্রামের জীবনচিত্র পাল্টে দিয়েছে। শিক্ষিত যুবকরাও এখন এমন খামার করতে এগিয়ে আসছেন। ফলে দিনে দিনে বাড়ছে খামারের সংখ্যা। কিছু সমস্যা থাকলেও খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প এখন রাঙ্গুনিয়ার ঘরে ঘরে।
উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ ১ হাজার ঘনফুটের বায়োগ্যাস প্লান্ট মালিক সৈয়দ আহমেদের ছেলে সালাউদ্দিন। স্থাপনের পর থেকেই চলছে দিন বদলের পালা। প্রবাদে আছে, ‘খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী’Ñ অর্থাৎ একটি গো-খামার থেকে উৎপন্ন দুধের চেয়েও গোবর থেকে বহুগুণ বেশি অর্থ আয় করা সম্ভব। সালাউদ্দিন জানান, রাঙ্গুনিয়া যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সহযোগিতায় ওই গো-খামার গড়ে তোলার পর সেখানে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে স্থাপন করা হয় বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। যেখান থেকে উৎপন্ন হচ্ছে বায়োগ্যাস (মিথাইল গ্যাস)। বায়োগ্যাস প্লান্টে উৎপন্ন মিথাইল বায়োগ্যাসে চলছে পারিবারিক রান্নাবান্নার কাজ। পাশাপাশি তিনি আশপাশের বিভিন্ন বাড়িঘর ও দোকানেও বাণিজ্যিকভাবে গ্যাসের সংযোগ প্রদান করছেন। গ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত গোবর উর্বর জৈব সার হিসেবেও তিনি ব্যবহার করেন। এছাড়াও সালাউদ্দিনের গরুর খামারে উৎপাদিত দুধ-মিষ্টি ও এ জাতীয় বিভিন্ন উপাদান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তার খামারে উৎপাদিত দুধ নিজস্ব দুইটি মিষ্টির দোকানের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলা ও পাশের বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত সরবরাহ করছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন, শিলক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা বায়োগ্যাস উপসহকারী প্রকৌশলী পার্বন চাকমা প্রমুখ তার বায়োগ্যাস প্লান্ট ও গো-খামার পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা সৃজনশীল কাজে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা ও ৫ হাজার টাকা অনুদান করেন।
জানা গেছে, ওই গো-খামারে ছোট-বড় উন্নত জাতের প্রায় অর্ধশতাধিক গরু রয়েছে। এসব দুধেল গাভী থেকে দিনে প্রায় ৪০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ খামার থেকে দৈনিক প্রায় ৬০ থেকে ৭০ মণ তাজা গোবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই তাজা গোবর প্রথমে বায়োগ্যাস প্লান্টে পরে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, রাঙ্গুনিয়ায় যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কারিগরি সহায়তায় ছোট-বড় প্রায় শতাধিক বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে। এসব বায়োগ্যাসে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের মানুষের গ্যাসের চাহিদাও মেটানো হচ্ছে। সরকার বায়োগ্যাস প্লান্টকে উৎসাহিত করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা ও অনুদান প্রদান করে থাকে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, একটি গো-খামার থেকে একদিকে যেমন দুধ পাওয়া যাচ্ছে অন্যদিকে খামারের গরুর গোবর থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়াও এখান থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে টিভি, ফ্রিজ, বাল্ব জ্বালানো সম্ভব। এতে একদিকে যেমন বাড়তি আয় করা যাবে অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যয়ও কমে যাবে। এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গো-খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে কল্পনাতীত ভূমিকা রাখছে।