নারী সচেতনতায় ওঁরা চারজন

শুধু শেখা বা জানা নয়; জানানো, শেখানো এবং এর চর্চা শিক্ষাজীবনেরই অংশ। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই পথে নেমেছেন চারজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী। তাঁরা দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী মেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠার দীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁদের জানানোর বিষয়গুলো শৈশবেরই অতি প্রয়োজনীয় কতগুলো ব্যবহারিক বিষয়। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, যৌথ নির্যাতন মোকাবেলা, বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য সমস্যা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ ভ্রমণ প্রভৃতি।

উদ্যমী ওই চার নারী হলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিয়া হক ও মানসী সাহা তুলি, ইডেন মহিলা কলেজের হিসাববিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী ও ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্য আসমা আক্তার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। স্কুটিতে করে এরই মধ্যে ছয়টি জেলা ঘুরে তাঁরা এখন খুলনায়। গতকাল সোমবার সকালে তাঁরা খুলনায় পৌঁছে হাজির হন খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল অ্যান্ড উইমেন্স কলেজে। পরে সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

সামাজিক ও পারিবারিক এক ধরনের মূল্যবোধের কারণে মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়। লজ্জায় কারো সামনে তা বলার অভ্যাসও গড়ে ওঠে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁরা ধারণা দেন। ওই সময়টাতে বিশেষ স্বাস্থ্যপদ্ধতি অনুসরণের কথাও বলেন তাঁরা। পথে-ঘাটে চলতে গেলে যৌন নিপীড়কদের মুখোমুখি হতে হয়। এ থেকে মুক্তি পেতে কিভাবে নিপীড়কদের মোকাবেলা করতে হবে সে সম্পর্কে বিশেষ শারীরিক কসরতও দেখান তাঁরা। ভ্রমণের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তাদের ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। বলা হয় মুক্তিযুদ্ধকালের গৌরবগাথা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীদের নির্যাতনের কথা।

চার পরিভ্রমণকারীর অন্যতম সদস্য সাকিয়া হক বলেন, ‘রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছি। পড়েছি নানা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। নিজের অবস্থা ও সমস্যার কথা বিবেচনা করেই অন্যদের জানানোর চেষ্টা করছি, যাতে সবাই এসব সমস্যা সহজেই মোকাবেলা করতে পারে। ’ জানালেন, এ চিন্তা থেকেই তাঁরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে ‘ট্রাভেলস অব বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক গ্রুপ) গড়ে তুলেছেন। সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা এরই মধ্যে ১০ হাজারে পৌঁছে গেছে।

সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খুলনার মেয়ে মানসী সাহা তুলি বলেন, ‘দেশজুড়ে ভ্রমণের লক্ষ্যে গত ৬ এপ্রিল আমরা যাত্রা শুরু করি। ছয়টি জেলা ঘুরে আজ (সোমবার) এসেছি খুলনায়। এখানে কলেজিয়েট গার্লস স্কুল অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের ছোট বোনদের তাদের সমস্যা মোকাবেলা করার কথা বলতে পেরে খুব ভালো লাগছে। একসময় আমরা সমস্যায় পড়েও প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি। আমরা চাই আমাদের ছোট বোনেরা প্রতিবাদ করুক। তারা দেশকে জানুক, দেশের ইতিহাস জানুক, মুক্তিযুদ্ধের কথা জানুক। ’