খাঁচায় রং-বেরঙের বিচিত্র সব পাখি পোষার মাধ্যমে শখ পূরণ করছে মানুষ। সেই সঙ্গে এটি হয়ে উঠছে তার বিনোদন এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের অন্যতম একটি উপায়। বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উত্পাদন করছেন এদেশের ব্রিডাররা। বিগত কয়েক বছরে এই সেক্টরটি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বর্তমানে খাঁচার পাখি হিসেবে বাজেরিগার, ফিঞ্চ থেকে শুরু করে লাভবার্ড, ককাটিল, জাভা, টারকুইজিন, রোজেলা, কনিউর, ইন্ডিয়ান রিংনেক প্যারোট, লরি ও লরিকিট, বিভিন্ন রকমের ঘুঘু, আফ্রিকান গ্রে প্যারোট, কাকাতুয়া, ম্যাকাওসহ বিভিন্ন রকম পাখি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এত পাখির ভিড়ে সবচেয়ে ছোট যেটি সেটি হল ফিঞ্চ-পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি। এই ফিঞ্চের অনেকগুলো বিরল প্রজাতির ব্রিডিং করাতে সক্ষম হয়েছেন ফিঞ্চ সোসাইটি অব বাংলাদেশ- এর হেড অফ এডমিন মানিকগঞ্জের আবদুল হান্নান দিনার।
তিনি জানান, বাংলাদেশের পরিবেশ ফিঞ্চ পাখি উত্পাদনের জন্য খুবই ভাল। শুধু দরকার যথেষ্ট ধৈর্য, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং পাখির প্রতি ভালোবাসা। সেই সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো, এভিয়ান সাপ্লিমেন্টের সরবরাহ, পাখি এবং পাখির খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্থিতিশীল রাখা। ঢাকায় কাঁটাবনের মতো পাখির বাজার প্রায় সব বিভাগীয় শহরেই গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও পাখির হাট বসে। পাড়া-মহল্লায় পাখির দোকান চোখে পড়ে। বিভিন্ন বয়সের লক্ষাধিক মানুষ পাখি পালনের সঙ্গে জড়িত। ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী এমনকি অবসরপ্রাপ্তরাও বাদ যাননি এই শখ থেকে। গৃহবধূরা ঘর সামলান, আবার পাখিও পালন করেন। এছাড়া অনলাইনেও চলে পাখি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান এবং বেচাকেনাসহ যাবতীয় সব কিছু। সঠিক পদ্ধতিতে করলে ফিঞ্চের ব্রিডিং-এ সাফল্য লাভ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ নতুন পরিচিতি পেতে পারে সম্ভব বলে জানালেন আবদুল হান্নান দিনার। তিনি বলেন, তার বাবা আব্দুর রউফ কবুতর পালন করতেন। তা দেখে ছোটবেলা থেকেই তার শখ নতুন জাতের পাখি পালন করার। মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে মাষ্টার্স শেষ করে ২০১২ সাল থেকে দিনার শখের বসে পাখি পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার নিকট প্রায় ২৫ প্রজাতির ফিঞ্চ রয়েছে, যেগুলো সংখ্যায় এক শতাধিক। এদের মধ্যে রয়েছে করডোন ব্লিউ, পার্পল গ্রেনাডিয়াার, ওয়াক্সবিল, প্যারাডাইজ ওয়াইডাহ, মাস্কড গ্রাস ফিঞ্চ, বিভিন্ন ধরনের জেব্রা, গোল্ডিয়ান, আউল, স্টার, প্যারোট, বেঙ্গলীজ ফিঞ্চ ইত্যাদি। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই ব্রিডিং/প্রজনন করাতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি বছর তিনি ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার পাখি দেশের বিভিন্ন ফিঞ্চ পালকদের কাছে বিক্রি করেন। পাখির জন্য প্রতি মাসে তার খরচ হয় গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রজাতিভেদে একেকটি ফিঞ্চ পাখির দাম ৪০০ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রকৃতিতে ফিঞ্চ ৩-৪ বছর বাঁচলেও খাচায় পর্যাপ্ত যত্ন নিয়ে এদেরকে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব। এদের দৈহিক গঠন অনেকটা আমাদের চড়ুই পাখির মতো, প্রজাতিভেদে বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে। দিনারের মতে, আকারে খুব ছোট হওয়ায় বাসার এক কোণে, সিঁড়িঘরে, বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় ছোট্ট পরিসরে অনায়েসেই এই পাখি পালন করা যায়। অনলাইনে ফিঞ্চ কম্পিটিশন আয়োজনের পাশাপাশি ফিঞ্চ পালকদেরকে যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়ে অনেক দিন ধরেই সাহায্য করে আসছে “দি ফিঞ্চ সোসাইটি অব বাংলাদেশ” নামক ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপটি। সেখানে আব্দুল হান্নান দিনারের পাশাপাশি জুনায়েদ ইসলাম, চিন্ময় সেন, সানজীদ ইসলাম, মাসরিকুল ইসলাম একসঙ্গে কাজ করছেন ফিঞ্চ সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং মানুষকে খাঁচার পাখি পালনে আগ্রহী করে তুলতে। দিনার বলেন, পাখির প্রতি ভালবাসা খারাপ নেশা থেকে দূরে রাখতে পারে তরুণ প্রজন্মকে। তাই সন্তানদের পাখি কিনে দিতে তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।