সিলেট নগরীর বস্তি এলাকার ঝরে পড়া শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘আরবান সøাম আনন্দ স্কুল’। প্রাথমিকভাবে এসব বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বস্তির ২ হাজার ৭৬০ জন শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নন ফরমাল প্রাইমারি এডুকেশনের আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এসব বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ঝরে পড়া শিশুরা পড়ালেখা করতে পারবে। বিদ্যালয়বহির্ভূত কোনো শিশু যাতে প্রাথমিক শিক্ষার বাইরে না থাকেÑ এটাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে এরই মধ্যে ২৩টি কম্পাউন্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি কম্পাউন্ডে চার থেকে আটটি শিখন কেন্দ্র (এলসি) ও একটি চাইল্ড ক্লাব থাকবে। প্রতি এলসিতে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে।
রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) ফেজ-২ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ধরনের বিদ্যালয়ে ৫ বছরের শিক্ষা কোর্স ৩ বছরে সম্পন্ন করা হবে। অধ্যয়নরত শিশুরা প্রথম দুই বছরে গ্রেড-৪ পর্যন্ত সমাপ্ত করতে পারবে। তৃতীয় বছরে তারা পঞ্চম শ্রেণী সমাপ্ত করবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভাতা, বিনামূল্যে পাঠ্যবই ও শিক্ষা উপকরণও দেয়া হবে। স্থানীয় সরকার, অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার্থী, কম্পাউন্ড শিক্ষক, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা, নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়ে কম্পাউন্ড ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) গঠন করা হবে।
রস্ক ফেজ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. এম মিজানুর রহমান জানান, সিলেটসহ সারা দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন এলাকায় এ ধরনের স্কুল পরিচালনা করা হবে। এর মাধ্যমে এসব শিশু করপোরেশনের ৫০ হাজার শিশুকে এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি জানান, অনেক সময় বস্তি এলাকার শিশুরা অপরাধ এবং মাদকে জড়িয়ে পড়ে। বস্তি এলাকার শিশুদের নিজেদের জন্য নিজেকে তৈরি করার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, হতদরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া লোকজনকে আমরা মূল স্রোতধারায় আনতে চাই। তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এর মাধ্যমে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলও (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ প্রকল্পে অর্থায়নকারী সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড প্রোভার্টির সেক্টর ডিরেক্টর ড. ফ্রেডরিক ক্রিস্টোফার বলেন, এটা ঝরে পড়া শিশুদের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ (সেকেন্ড চান্স)। ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষিত করে তোলাই তাদের মূল লক্ষ্য। সিলেটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, কর্মে নিয়োজিত শিশুদের বেশিরভাগ বস্তি এলাকার। এসব বস্তির ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা বিদ্যালয়ে আসে না। তিনি বলেন, আনন্দ স্কুলসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসব বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। সিলেট নগরীতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহীন বলেন, এর আগেও তারা সিলেটে এ ধরনের ১২টি স্কুল পরিচালনা করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। নতুন বিদ্যালয় পরিচালনায় আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে বলে জানান তিনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হবে বলে জানান তিনি।