অদম্যপ্রাণ শফিকুল ট্রাকের হেলপার থেকে বিসিএস ক্যাডার!

কুড়িগ্রাম শহরের পলাশবাড়ির চকিদার পাড়ায় বাড়ি শফিকুলের। বাঁশের চাটাই আর পাটখড়ির বেড়ার জরাজীর্ণ ছোট দুটি ঘরে জীবনযাপন শফিকুলের পরিবারের। শফিকুলের মা মোছা. ছোবেনা বেগম, বাবা আব্দুল খালেকের চোখে মুখে সন্তান বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গৌরব।

বাবা বিড়ি শ্রমিক। অভাবের সংসারে শফিকুলের লেখাপড়া প্রথম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল সপ্তম শ্রেণিতেই। শিক্ষকরা স্কুলে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দিলেও খাতা-কলমসহ অন্যান্য খরচের অভাবে আবারও আটকে যায় তার পড়ালেখা। কিন্তু দমিয়ে রাখা যায়নি কুড়িগ্রামের মো. শফিকুল ইসলামকে। শিক্ষকসহ বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় পড়ালেখা শেষ করা শফিকুল নিজ মেধার জোরে এখন বিসিএস ক্যাডার। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে লালমনিরহাট সরকারি মজিদা খাতুন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।

টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়াতে পারেননি শফিকুল। পরে পাশের গ্রামের লাভলু নামের এক শিক্ষার্থী টাকা না নিয়েই প্রাইভেট পড়ায় শফিকুলকে। স্কুলের শিক্ষকরাও টাকা-পয়সা দিয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। স্কুুলে শফিকুলের বেতন নেওয়া হতো না। এভাবেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন শফিকুল। তার পরীক্ষার ফলও হয় সবাইকে চমকে দেওয়ার মতো। মানবিক বিভাগ থেকে জেলায় একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ-৫ পান শফিকুল। পরীক্ষার পর সংসারের সমস্যা সামলাতে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেননি শফিফুল। কাঠমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন পরীক্ষার পরই। এই কাজের ফাঁকে ব্যানার, ফেস্টুন লেখাসহ নানা ধরনের আর্টের কাজ করে টাকা উপার্জন করেন তিনি। বেশি টাকা পাওয়া যায় বলে ট্রাকের হেলপার হিসেবেও কাজ করেন শফিকুল।

শফিকুল ইসলামের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সংগীতশিল্পী কনক চাঁপা তাকে আর্থিক সহায়তা দেন। এরপর ঢাকার ‘মুক্তি আর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়। এই টাকা দিয়েই শফিকুল পার্বতীপুরের খোলাহাট ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে।

শফিকুলের প্রথম ইচ্ছে প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে বাবা-মায়ের থাকার ঘরটির মেরামত করা। আর নিজের ভবিষ্যত্ স্বপ্ন বাবা-মায়ের নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালু করা। তার মতো অভাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করতে চান। টাকা-পয়সার অভাবে কারো পড়ালেখা যেন থমকে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে চান শফিকুল।