নওগাঁর মহাদেবপুরের বেগুনের বাম্পার ফলনে দাম ভালো পাওয়াই কৃষকের মুখে হাসি। অধিক লাভজনক হওয়াই ধান ছেড়ে বেগুন চাষে ঝুঁকছেন এই উপজেলার কৃষকরা। বেগুন চাষ করে একদিকে কৃষকরা যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি ও সবজির চাহিদা পুরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মহাদেবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাটশাল, গোপালপুর, সরমইল, খোশালপুর, বালকাপাড়া গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে বোরো মৌসুমে তাদের জমিতে বোরো ধান চাষ না করে বেগুন চাষ শুরু করেছেন। অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই নিম্নে ৫ কাঠা থেকে সর্বোচ্চ ৬ বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় মাঠে মাঠে এখন কেবল বেগুনের ক্ষেত। কৃষকরা যশোরের ইসলামপুরী এবং সাদা গুটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন। উপজেলার নাটশাল গ্রামের হানিফ ২বিঘা জমি ২৫ হাজার টাকা করে প্রতি বছর ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে গত দুই বছর ধরে বেগুন চাষ করেছেন। আমজাদ এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তার মধ্যে গত রোববার ২ বিঘা জমির একদিনে ১শ’ ১৯মণ বেগুন তুলে ৯৫০ টাকা প্রতি মণ দরে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রয় করেছেন। বেগুন চাষে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। গোপালপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন ১০ কাঠা জমিতে এবং নাটশাল গ্রামের একরামুল হক ১৫ কাঠা জমিতে ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ১ বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ বেগুন চাষিরা জানিয়েছেন, বেগুন চাষে বোরো আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামূলক ভাবে বেগুনের বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ মণ। প্রতি মণ ৭শ’ টাকা হিসেবে উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৪শ’ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কৃষকের ঘরে তেমন লাভ কিছুই আসে না। অপরদিকে কৃষকদের বিবরণ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ২০ থেকে ২৬ হাজার টাকা। সেখানে পুরো মৌসুমে তা বেগুন পাচ্ছেন প্রায় দেড়শ’ মণ। বর্তমান বাজার অনুযায়ী গড়ে প্রতি মণ বেগুন পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করছেন ৯৫০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার পর্যন্ত লাভ করছেন। যার ফলে যে এলাকায় কোন দিন সবজি চাষ সম্ভব ছিল না সেখানকার কৃষকরা বেগুন চাষে এগিয়ে এসেছেন। তারা জানান আমন ধানের আবাদ ঘরে তোলার পর বোরো চাষের চিন্তা না করে বেগুন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত শুরু করেন। বেগুন চাষের পর আবার তারা মনোযোগ দেন আমন চাষের প্রতি। বেগুন চাষের পর আমন চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের দুটি লাভ হয়। এক্ষেত্রে জমিতে চাষ কম দিতে হয়। অন্যদিকে বেগুন চাষের জমিতে যে সার ব্যবহার করতে হয় পরবর্তীতে সেই সারের প্রভাব আমন ফসলে পড়ে। আমন আবাদে তেমন সার দিতে হয় না। সেই কারণে সারের খরচও কমে যায় বলে সার্বিক ভাবে আমন চাষের উৎপাদন খরচও কম পড়ে। এতে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন। বেগুন বিক্রি করতে কখনো কৃষকদের কষ্ট করে হাটে বাজারে যেতে হয় না। পাইকারি কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে কিনে নগদ টাকা দিয়ে যান। এতেও তারা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। পাইকারি বেগুন ক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ২ থেকে ৪ ট্রাক বেগুন কিনে তারা ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একেএম মফিদুল ইসলাম জানান, এ বছর উপজেলায় মোট ৪২০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ হয়েছে। গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩শ হেক্টর। আমন ধানের ফসল তোলার পর অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে বেগুনের চারা রোপণ করতে হয়। চৈত্র মাসের শেষ দিকে গাছে বেগুন ধরতে শুরু হয়। বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এই ৩ মাস ক্ষেত থেকে বেগুন তোলা এবং বিক্রি করা হয়। বেগুন চাষে পানি কম লাগে। সেচ খরচ একেবারে নেই বললেই চলে। একদিকে উৎপাদন খরচ কম অন্যদিকে ভালো বাজার মূল্য কৃষকদের বেগুন চাষে উৎসাহিত করে তুলছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে তাদের নিয়মিত নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।