আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে জাপান

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করল জাপান। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আপাতত ৪৯৭ একর জমির ওপর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে জাপান। পরে সেটি এক হাজার ১০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বন্ধুপ্রতীম দেশটির।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমঝোতা স্মারকে সরকারের পক্ষে সই করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। আর জাপানের পক্ষে দেশটির সুমিতো করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার আকিতো শিবাইশি সই করেন। অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসিসহ সরকার ও জাপানের পক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়ে জাপানের সঙ্গে ২০১৪ সাল থেকে আলাপ-আলোচনা চলছিল। অবশেষে একটি ধাপ পার হলো। এখন দুই পক্ষ মিলে একটি কম্পানি গঠন করা হবে। ’

বেজা সূত্র বলছে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় সে দেশের ব্যবসায়ীরা জমি চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি দেওয়ার আশ্বাস দেন। প্রাথমিকভাবে ঢাকার পাশে গাজীপুরের শ্রীপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রথম পছন্দের জায়গা ছিল জাপানি বিনিয়োগকারীদের। পরবর্তীতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) একটি সমীক্ষা করে। সেখানে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জাপান। সে আলোকে জাপানিদের জন্য জমির ব্যবস্থা করে সরকার। ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় জাপানি আড়াইহাজারে জমি উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ৭৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার পর অনেক জাপানি নাগরিক নিজ দেশে ফিরে যান। এতে করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় অনেক সময় পিছিয়ে যায়। সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে অবশেষে জাপান আবার ফিরে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বেজার কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজে ভারত ও চীন অনেক এগিয়ে গেছে। ভারতের জন্য কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও মোংলায় আলাদা দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। আর চীনের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭২ একর জমির ওপর অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও এগিয়ে চলেছে। তবে গত বছর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভেঙে পড়ে জাপান। ওই হামলায় সাত জাপানি নাগরিক মারা যান। এরপর জাপানি বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যান। জাপানি বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে গত বছর বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জাপান সফরে যান। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও জাপান সফরে যান। সরকারের তরফ থেকে জাপানিদের পূর্ণ নিরাপত্তার কথা জানানো হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি আবারও স্বাভাবিক হতে থাকে। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পগুলো ধীরে ধীরে গতি আসতে শুরু করেছে। গতকাল অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ পার হলো।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে জাইকার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে। জাইকা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেবে এমন বিশ্বাস বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের।

এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা তাতে, আড়াইহাজারে মোট এক হাজার ১০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল। তবে প্রাথমিকভাবে ৪৯৭ একর জমির উন্নয়ন করে সেখানে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু হবে। জাপানের জন্য আরো দুটি জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে।