জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং : গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। দিন দিন বাড়ছে পরিসর। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন, এমন গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৬ জন। যার মধ্যে লক্ষাধিক গ্রাহক প্রতিদিন লেনদেন করছেন। এরই মধ্যে এ খাতে কার্যক্রম শুরু করেছে ১০টি ব্যাংক। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এসব ব্যাংক নিয়োগ দিয়েছে ১ হাজার ৬৪৬ জন এজেন্ট। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির পরিমাণ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন সংশিষ্টরা। তবে যথাযথ নিয়ম মেনে এজেন্ট নিয়োগ না দিলে এ ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

জানা গেছে, ব্যাংকিং সেবা পৌঁছায়নি এমন এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে এ সেবার আওতায় আনতে ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। পরে ২০১৪ সালে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়ার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল শেষে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম রয়েছে ১০টি ব্যাংকের। এসব ব্যাংক ১ হাজার ৬৪৬ জন এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। আউটলেট চালু করেছে ২ হাজার ৬০১টি। গত বছর পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৬ জন গ্রাহক।

এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশে এসেছে ৩০৯ কোটি টাকার রেমিট্যান্স। এ ছাড়া ৩৮০ কোটি টাকার আমানত জমা হয়েছে অ্যাকাউন্টগুলোয়।

এজেন্টের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা ও টাকার স্থিতির দিক থেকে শীর্ষে অবস্থান করছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংকটি নিয়োগ দিয়েছে ৩৯২ জন এজেন্ট। চালু করেছে ১ হাজার ৮১টি আউটলেট। ব্যাংকটির নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টদের অধীনে খোলা হয়েছে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৬টি অ্যাকাউন্ট, যা এজেন্ট ব্যাংকিং খাতের মোট অ্যাকাউন্টের ৬৮ শতাংশ। এসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৮৬ কোটি টাকার আমানত। এজেন্টের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া। তবে এজেন্ট নিয়োগের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে তারা। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১১০ জন এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে ব্যাংকটি। ১ হাজার ১৫০টি আউটলেট চালু করার মাধ্যমে ব্যাংক এশিয়া ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। এসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকার আমানত। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা অন্য ব্যাংকগুলো হলো- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের মধুমতি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকও এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছে।

জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গত ডিসেম্বর মাসেই ২১৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ সেবায় যারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে তারা ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করতে পারছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করতে পারছে। উপযোগ-সেবা, বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ প্রদান করতে পারছে এজেন্টরা। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারছে এসব এজেন্ট।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, যাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা আছে, তারা দ্রুতই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক হচ্ছেন। কারণ আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে ব্যাংকের শাখার মতো সুদ পাওয়ায় গ্রাহকরা সহসাই আকৃষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং যেহেতু ব্যাংকের একটি সেবা, তাই নিরাপত্তার বিষয়টিও গ্রাহকরা প্রাধান্য দিচ্ছেন। ব্যাংক এশিয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, আমরা এ সেবার মাধ্যমে ২ বছর ধরে গ্রামের মানুষদের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছি। এতে ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশের সব ইউনিয়নে এ সেবা রাখার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ জন্য বিনিয়োগ ও জনবল বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে এটি বেশ গতি পেয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গাইডলাইনে কিছু পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।