ডেভিড ক্যামেরন বললেন অগ্রগতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ

বিশ্বে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। একই সঙ্গে তিনি উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে মানসম্মত গণতন্ত্রসহ তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। মানসম্মত গণতন্ত্র অর্জন, দুর্নীতি দমন এবং সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জ সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে ‘২০১৭ সালে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ক্যামেরন বলেন, ‘গণতন্ত্র কেবল নির্বাচন নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের মানোন্নয়নে তিনি সুশাসন, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও সবার অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। ’

বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, ক্যামেরন তাঁর বক্তৃতায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ও বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ও এর আগে বাংলাদেশে আসার সুযোগ না পাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের করতালির মধ্যে তিনি বলেন, ‘আজ আমি কিন্তু নিজেই এসেছি। ’

বাংলাদেশে উন্নয়ন ও বিদেশি সাহায্যের সদ্ব্যবহারের উদাহরণ টেনে ক্যামেরন বলেন, ‘যাঁরা বলেন সাহায্যে কোনো ফল আসে না; তাঁদের উচিত বাংলাদেশে এসে বিদেশি সাহায্য সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে এ দেশ কিভাবে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে তা দেখা। ’

উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের জ্বালানি, অবকাঠামো, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্রিটেনের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তিনি দক্ষ পেশাজীবী তৈরি করতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার ওপর গুরুত্ব দেন। বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে ও উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে পৌঁছাতে দক্ষ পেশাজীবী প্রয়োজন।

বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘কোনো দেশই দুর্নীতিমুক্ত নয়। দুর্নীতির মাত্রা কম হলে তা গ্রহণযোগ্য—এই ধারণাটিই ভুল। এটি একটি ক্যান্সার, যা আমাদের দেশের রাজনীতি ও বিশ্বাসকে ধ্বংস করে। ’

দুর্নীতির ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে ক্যামেরন বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব সবাইকে দুর্নীতির ব্যাপারে জ্ঞান দেয়। অথচ দরিদ্র দেশগুলো থেকে টাকা চুরি হয় এবং সেগুলো লুকিয়ে রাখা হয় সম্পদশালী দেশগুলোতে। ’

বিডিনিউজ জানায়, ক্যামেরন বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের উগ্রবাদী আদর্শের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও অভিন্ন লড়াই চালানোর ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, শুধু সহিংস লোকদের বিরুদ্ধেই নয়, লড়াই করতে হবে সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধেও।

ক্যামেরন বলেন, ‘আমরা যদি এই সহিংস মতবাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হতে পারি, তাহলেই আমরা জয়ী হব। ’

সন্ত্রাস প্রসঙ্গে ক্যামেরন বলেন, ‘এটি সভ্যতার লড়াই নয়। এটি ধর্মের ভেতর লড়াই। ’ তিনি বলেন, ‘ইসলামের অনুসারীদের একটি অংশ উগ্রবাদী ভাবনায় বিশ্বাসী। তাই একে সভ্যতার লড়াই মনে করা ভুল হবে। ’

ক্যামেরন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমাদের বিশ্বাস করাতে চায়, এ যুদ্ধ সভ্যতার বিরুদ্ধে। তারা বিশ্বাস করে, আমরা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একসঙ্গে বসবাস করতে পারি না। ’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তৃতায় ডেভিড ক্যামেরনকে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ আগের মতোই সুবিধা পাবে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।

উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন নাগরিক সমাজের সদস্য, ব্যবসায়ী নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকরা। সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট এনাম আলীও বক্তব্য দেন।

ডেভিড ক্যামেরন ওই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে ঢাকায় অন্য একটি হোটেলে নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন। ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের (আইজিসি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আয়োজিত ওই আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন : ভঙ্গুরতা, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন। ’ এতে অন্যান্যের মধ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইজিসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুলতান হাফিজ রহমান, কান্ট্রি উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন কাশেম খান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ডেভিড ক্যামেরন ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের অধীন রাষ্ট্রের ভঙ্গুরতা, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নবিষয়ক কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।